নেত্রকোণায় নাব্যতা সংকটে নদ-নদীর তলদেশে ধান চাষ

গোলাম কিবরিয়া সোহেল, নেত্রকোণা প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
নেত্রকোণায় নাব্যতা সংকটে নদ-নদীর তলদেশে ধান চাষ
ছবি: আমার সংবাদ

পাহাড়ি নদী ও হাওর বেষ্টিত জেলা নেত্রকোণা। এ জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট বড় ৮৫টি নদ-নদী। সারা বছর এসব নদ-নদী পানিতে টইটুম্বর থাকতো। পাল তোলা নৌকার সাথে সাথে লঞ্চ, স্টিমার ও কার্গো জাহাজ চলাচলের পাশাপাশি নৌ-পথে পণ্য পরিবহণ খরচ কম হওয়ায় এ অঞ্চলের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নৌযানে তাদের মালামাল পরিবহণ করতো।

এছাড়াও নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে তাদের হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদন করে আসছিল। এক সময়ের খরস্রোতা নদ-নদী গুলো কালের বিবর্তনে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সে সব নদ-নদীতে এখন আর আগের মতো পানি প্রবাহিত হয় না।

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পলি-বালি জমে বেশির ভাগ নদ-নদী এখন তাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদীর বুক জুড়ে তৈরি হচ্ছে ফসলের মাঠ। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা জেলার ৮৫টি নদ-নদীর মধ্যে বড় বড় কংশ মগড়া সোমেশ্বরী, ধনু ও উব্দাখালী নাম বলতে পারলেও বেশিরভাগ নদীর নাব্যতা হারিয়ে যেতে বসায় তাদের নাম বলতে পারছে না।

ইতিমধ্যে নেত্রকোণা থেকে হারিয়ে যেতে বসা নদ-নদীগুলো হচ্ছে, আত্রাখালী নদী, কাওনাল নদী, কাকুরিয়া নদী, কানসা নদী, কানাই নদী, কালিয়ারা নদী, কালিহর নদী, কর্ণ বালজা নদী, কালা পানি ঝরা নদী, গুনাই নদী, জলকান্দি নদী, জল শিমুলকান্দি নদী, জারিয়া নদী, তেওড়াখালী নদী, ধলাই নদী, ধোপখলা নদী, ধুপিখালী নদী, নিতাই নদী, বাউরী নদী, ছিলা নদী, তুষাই নদী, বল নদী, বলী নদী, বালই নদী, বেদুরী নদী, বানোয়ারী নদী, বার“নৃ নদী, বালিয়া নদী, বাঁকহারা নদী, বিষনাই নদী, বেতাই নদী, মরা সুরমা, নয়া নদী, পাতকুড়া নদী, পিয়াইন নদী, সিনাই নদী, রাজেশ্বরী নদী, ধলেশ্বরী নদী, পাটেশ্বরী নদী, ফুলেশ্বরী নদী, লাউয়ারী নদী, সুতি নদী, সুরিয়া নদী, সাইঢুলি নদী, সোনাই নদী প্রমুখ।

কেন্দুয়া উপজেলার কলেজ শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম আসিফ বলেন, এলাকার প্রবীণদের কাছে অনেক নদ-নদীর নাম শুনেছি কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ নদীর প্রকৃত রূপ আমরা দেখতে পাইনি। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, নেত্রকোণার হারিয়ে যেতে বসা নদ-নদীগুলো যেন দ্রুত খনন করে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়।

নেত্রকোণার মদন উপজেলার মগড়া নদী ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের পেছন ও নায়েকপুর ইউনিয়নের চন্দ্রতলা গ্রামের সামনে দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে পাশের উপজেলা কেন্দুয়ার সাইডুলি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

এ ছাড়াও ধলাই নদী ছত্রকোনা গ্রামের পিছন দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে তিয়শ্রী ইউনিয়নের সাহিতপুর গ্রামের পিছনের মগড়া নদীতে মিলিত হয়েছে। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহল ছত্রকোনার পেছনের অংশসহ বিভিন্ন অংশ, যে যার মতো দখলে নিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে ধান চাষ করেছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে নীরব থাকায় সচেতন মহলের ধারণা, জনগণ একদিকে নদীর উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে সরকার বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারাচ্ছে।

নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা জানান, তারা এই নদীর পানি দিয়ে সারা বছর ঘর গৃহস্থালির কাজ করতো। বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার কোনো চিন্তা করতে হতো না। এখন আর জমিতে সেচ দেয়ার মতো পানি নেই।

তারা আরো জানান, এলাকার জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকায় মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হয়েছে জেলেসহ সাধারণ জনগণ। দুই তীরে যাদের জমি আছে তারাই নদী দখলে নিচ্ছে। যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে। কেউ কেউ সুবিধা অনুযায়ী নদী থেকে বালি উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নদ-নদী ও খালের নাব্যতা রক্ষায় ইতিমধ্যে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি নদী ও বেশ কয়েকটি খাল খননের কাজ চলমান রয়েছে। আরো ২৪টি খাল খননের প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ এর সাথে  যোগাযোগ করলে তিনি আমার সংবাদকে জানান, যে সব নদ-নদী ও খাল খননের প্রয়োজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তার একটি তালিকা তৈরি করে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অচিরেই নদী থেকে সকল প্রকার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে।

এআরএস