নিরাপদ খাবার পানি এখন সময়ের দাবি

তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম
নিরাপদ খাবার পানি এখন সময়ের দাবি
ছবি: আমার সংবাদ

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর, খলিষখালী, নগরঘাটা  অধিকাংশ গ্রামেই রয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। আর এই সংকটের প্রভাব নারীকেই পোহাতে হয়। কারণ পানি সংগ্রহ করে নারী আবার পানি কমও পান করে নারীরা। এসব গ্রামে যাদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা পানি কিনে খায় কিন্তু দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য তা একেবারেই অসম্ভব।

উপকূলের অধিকাংশ গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির উৎস না থাকায় হাজার হাজার পরিবারের প্রতিনিয়ত খাবার পানির তীব্র সংকটকের মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন জীবন পার করতে হয়। এই অঞ্চলগুলিতে খাবার পানির ভালো উৎস হলো বৃষ্টির পানি ধারণ ও সংরক্ষণ করা।

এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ লক্ষণীয় ও প্রশংসনীয়। সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে তিন হাজার লিটারের পানির ট্যাংকি বিতরণ করছে।

এক্ষেত্রে সরকারি ফি এক হাজার ৫০০ টাকা। তবে এই ট্যাংকি সুবিধা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র বা অতিদরিদ্রদের নাগালের বাইরে। অন্যদিকে সরকারিভাবে ভূগর্ভস্থ পানির উৎস রয়েছে এমন স্থানে হস্তচালিত এবং সাবমার্সয়েবল টিউবওয়েলের সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। তবে এই টিউবওয়েলের জন্য একজন আবেদনকারীকে সাত হাজার ও ১০ হাজার করে টাকা জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। যদিও এই টাকাও দরিদ্র পরিবারের পক্ষে জমা দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে এই সুবিধা চলে যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত ধনীদের কাছে।

উত্তরণ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জমাদ্দার জানান, বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ দাতা সংস্থা সিমাভির অর্থায়নে জেলার তালা উপজেলার ৪০০ পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, নিরাপদ খাবার পানি এবং হাইজিন চর্চা জরিপ করে দেখেছে সেখানে কোন পরিবারই এসডিজি মানদণ্ডের শর্ত পূরণ করে না।

পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক  মীর জিল্লুর রহমান বলেন, নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও স্বাহ্যসম্মত হাইজিন এসডিজি-৬ এর লক্ষ্য পূরণের প্রধান শর্ত। কিন্তু এ উপজেলায়   স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অবস্থা মোটেও এসডিজির মানদণ্ডের কাছাকাছিতে নেই। নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ঘর ও উন্নত হাইজিন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সরকারি, বেসরকারি এবং স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন তিনি।

তালার জালালপুরের আটুলিয়া গ্রামের শাপলা বেগম, দোহার গ্রামের ডালিয়া সুলতানা, আটঘরা গ্রামের রিংকু দাশ, আটুলিয়ার আয়শা বেগম, নগরঘাটার চকেরকান্দা গ্রামের জেবুন্নেছা, জলি বেগম, গাবতলী গ্রামের সামছুন্নাহার, বেড়াডাঙ্গী গ্রামের শংকর বিশ্বাস, খলিষখালীর দুধলী গ্রামের অনুপ সরকার,  ঊর্মিলা মণ্ডলসহ অনেকেই জানান, তাদের এলাকায় বৃষ্টির সময় ৫-৬ মাস জলাবদ্ধতা থাকে এবং লবণাক্ততার কারণে খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। প্রায় ২-৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার একড্রাম পানি ২০ থেকে ৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ভিটে-বাড়িতে পানি জমে থাকায় শৌচাগার ব্যবহারের মতো অবস্থা থাকে না।

এ ব্যাপারে জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, এলাকায় খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাবের পাশাপাশি আর্সেনিকের সমস্যা প্রকট। ভয়াবহ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অত্র এলাকার কৃষ্ণকাটী গ্রামের একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কৌশিক রায় জানান, উপজেলার খেশরা ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকায় লেয়ার না পাওয়ায় ডিপ-টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। তবে জালালপুর ও খলিষখালী ইউনিয়নে ডিপ-টিউবল বসানো সম্ভব হলেও তা উপকূলীয় এলাকা হওয়ায়, একটা সময় পর ডিপ-টিউবওয়েল গুলোতে লবণের পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে, যা পানের অযোগ্য।

বর্তমানে জালালপুর,খেশরা ও মাগুরা ইউনিয়ন গুলোতে নিরাপদ  পানির  সুব্যবস্থার জন্য বৃষ্টির  পানির ট্যাংকি প্রদান করা হচ্ছে। তবে নিরাপদ পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে বলে জানান তিনি।

এআরএস