ব্যাংকে হামলার তিন সপ্তাহ আগে এক ফেসবুক পেজ থেকে ‘বদলা নেওয়ার’ ঘোষণা দেয় পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী এ সংগঠন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের দুই সদস্যকে আটকের ‘ফিডব্যাক’ হিসেবে তারা এ ঘোষণা দিয়েছিল।
‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি- কেএনএ’ নামের এক ফেসবুক পেজ থেকে গত ১২ মার্চ এক পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চুক্তি ভঙ্গ করে বম সম্প্রদায়ের নিরীহ জনগণ লালমুয়ানওম বম (গিলগাল বা অবচলিত পাড়া) এবং রামনুয়াম বমকে (দুনিবার পাড়া) আটক করেছে। এর ফল খুব সুন্দরভাবে ফিডব্যাক দেওয়া হবে। নিরীহ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করা না হলে।’
সংগঠনটির ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন ফ্লেমিংয়ের বরাতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনটির এ ঘোষণার ২১ দিনের মাথায় গতকাল বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে তারাবি নামাজের সময় বান্দরবানের রুমা শাখা সোনালী ব্যাংক ও আশেপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে শতাধিক সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মসজিদ থেকে ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে ধরে নিয়ে ব্যাংকের ভেতরে মারধর করে তারা। পরে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এ সমময় ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১০ পুলিশ ও ৪ আনসার সদস্যকে নিরস্ত্র করে ৮টি চাইনিজ অটোমেটিক রাইফেল, ২টি এসএমজি, ৪টি শটগান ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় ২ পুলিশ সদস্য আহত হন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সামনে সশস্ত্র ইউনিফর্ম পরা কিছু লোক দাঁড়িয়ে ছিল। নামাজ শেষ করার সাথে সাথে বলে তোমরা কেউ নড়াচড়া কোরো না, চুপ করে বসে থাকো। পরে ম্যানেজারকে ধরে নিয়ে যায়।’
মঙ্গলবারের এ ঘটনার ১৬ ঘণ্টা পর থানচিতে আরও দুটি ব্যাংকে ডাকাতি হয়। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন জানান, বুধবার বেলা ১টার পর থানচির সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি লুট হয়েছে। তবে কৃষি ব্যাংক থেকে লুট হওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ। এ ঘটনার পর বান্দরবানে বিভিন্ন উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের ৬টি শাখা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা, ম্যানেজারকে অপহরণ ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী। ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে তার হিসাব করা হচ্ছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ধারণা, জঙ্গি কুকি চীন সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছে। তবে এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা এখনও নিশ্চিত করেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন ভাবে ট্র্যাক করার চেষ্টা করছি যে তার অবস্থানটা কোথায়। আমরা আশা করছি ফলপ্রসু কিছু একটা হবে।’
জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, ‘তারা যে সোনালী ব্যাংকে ঢুকেছে এই চিহ্ন আমরা পেয়েছি। তবে এখানে কারা ছিল তা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভল্টের দরজার মধ্যে চাবি ভাঙ্গা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ফরেনসকি টিম এসে ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহের পর ভল্টের ভেতরের অবস্থা জানা যাবে।
এদিকে, বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ৩ ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় নিষিদ্ধ গোষ্ঠী কুকি-চিনের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইদানিংকালে আমরা দেখছি আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশ ও বিজিবি অভিযান শুরু করেছে। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীও অভিযানে যোগ দেবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রুমাতে সাবস্টেশন বন্ধ করে তারা সোনালী ব্যাংকে যায়। সেইসময় পুলিশ এবং শৃঙ্খলার দায়িত্বে যারা ছিলো তারা তারাবির নামাজ পড়ছিল। আজকে থানচিতে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকেও তারা চেষ্টা করেছে। এটা প্রতিরোধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব বিষয় দেখা হচ্ছে।’
আরএস