অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে জামায়াত। নেই নিবন্ধন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে মরণ কামড় দেবেন জামায়াত। এজন্য সকল উপজেলায় প্রার্থী না দিয়ে জামায়াতের আঁতুড়ঘর সাতকানিয়া লোহাগাড়া ও বাঁশখালীতে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে এই তিন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকার সুযোগে পুরো চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে জামায়াত এই তিন উপজেলা টার্গেট করেছেন।
পবিত্র রমজান মাসে ইফতার পার্টি ও ঈদ পুনর্মিলনী ব্যানারে প্রায় প্রস্তুতি শেষ করেছেন। টার্গেট করা তিনটি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিতে সকল কৌশলের সাথে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও ছাত্রী সংস্থা পুরোদমে মাঠে নেমে পড়েছেন।
সেই পুরোনো অভ্যাস জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে ইসলামকে পরিপূর্ণ সমর্থক করা। জামায়াতকে ভোট দিলে বেহেশতের রাস্তা খুঁজে পাবেন। ইত্যাদি ইত্যাদি ইসলাম ভিত্তিক কথা বলে নারী ভোটারদের টানতে শুরু করেছেন। পালিয়ে থাকা জামায়াতের নেতাকর্মী সমানে ঢুকে পড়ছে নির্বাচনি এলাকায়।
জামায়াতের টার্গেটে থাকা উপজেলা তিনটির মধ্যে আ.লীগের চরম গ্রুপিং রয়েছে। গ্রুপিংয়ের পর্যায় এমন পরিস্থিতিতে গিয়ে ঠেকছে ঈদে কোলাকুলি বা ঈদ মোবারক প্রকাশ্যে করতে ভয় পায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, একদিকে গেলে অন্যদিকে মাইন্ড করে। তাই কোন দিকে যাচ্ছি না। শুধু শুধু শত্রু তৈরি করে লাভ কী। আ.লীগের গ্রুপিংও কাজে লাগাতে চায় জামায়াত। পবিত্র রমজান মাস ও ঈদে ওয়ার্ড ইউনিয়ন উপজেলায় ইফতার মাহফিল এবং ঈদ পুনর্মিলনীর ব্যানারে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন বলে নিশ্চিত করেন জামায়াতের দায়িত্বশীল এক নেতা।
দলটি তিনটি পদে ফোরাম ভিত্তিক প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দলটির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণের আমির অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আলম চৌধুরি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে লোহাগাড়া উপজেলা থেকে আমিরাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম চৌধুরী এবং সাতকানিয়া উপজেলা থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং বাঁশখালী থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন দলটির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূল আ.লীগ টানা দলকে ক্ষমতায় রেখেছেন। আর তৃণমূলের সুবর্ণ সুযোগে যেন আজ কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা এড়াতে ভোটে হস্তক্ষেপ না করতে দলীয় নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের নির্দেশনা দেয় আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূল আ.লীগ। তৃণমূল আ.লীগে গ্রুপিং বিভাজন বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম দক্ষিণে এই তিন উপজেলাকে জামায়াতের শিকড় বলা হয়। তারা কোনো প্রকারে জিততে পারলে মুছে ফেলবে আ.লীগের নামনিশানা।
চট্টগ্রামে দক্ষিণ জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আলম চৌধুরী কথা বলেন দৈনিক আমার সংবাদের সাথে। বলেন, জামায়েত নির্বাচনকে সম্মান করে। তবে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করবে কি করবে না এখনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি। সরকারের উপর কোনো আস্থা বা পরিবেশ জামায়াত পাচ্ছে না। প্রতীক দিয়ে বা প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। এবারের সংসদ নির্বাচনে ডামি বা নিজেদের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ উপজেলায়ও কাজে লাগাতে যাচ্ছে সরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঈদ পুনর্মিলনী দলীয় অনুষ্ঠান না। ঈদের সময় আমরা একত্রিত হই। তাই আমরা ঈদ পুনর্মিলনী করি। সেখানে নির্বাচন বা দলীয় কোনো আলোচনা হয়নি।
তিন সম্ভাব্য প্রার্থী প্রসঙ্গে বলেন, দল থেকে নীতিগতভাবে কারো নাম সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি বা করছি না তা সিদ্ধান্ত হয়নি সেখানে প্রার্থীর নির্দিষ্ট নাম প্রশ্নেই আসে না। কেউ যদি নিজেদের নাম কৌশলে প্রচার করে তার দায়ভার তাকে নিতে হবে বা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
ইএইচ