ভোট না দেয়ায় যুবককে ইউপি সদস্যের মারধর, ভিডিও ভাইরাল

কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
ভোট না দেয়ায় যুবককে ইউপি সদস্যের মারধর, ভিডিও ভাইরাল

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তিকে জিম্মি করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্যাতিত ব্যক্তিকে মাটিতে শোয়ানো অবস্থায় ধরে রেখে তাকে পেটাচ্ছেন গ্রাম পুলিশের সদস্য আমান উল্লাহ ওরফে বাবু।

বর্বর নির্যাতনের এই ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পাতাবাড়ি স্টেশনে। হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বাদশা নিজস্ব কার্যালয়ে এই নির্যাতন চালানো হয়।

নির্যাতনের ভিডিওটি সম্প্রতি প্রকাশ্যে চলে আসায় উখিয়াজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের মাঝে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

ভুক্তভোগী আকতার মিয়ার বাড়ি হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ঘাটিপাড়ায়। সম্প্রতি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তার উপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

নির্যাতনের শিকার আকতার মিয়ার দাবি, নির্বাচনে ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বাদশার পক্ষে কাজ না করায় তার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। তার দাবি, হঠাৎ একদিন তাকে জিম্মি করে পাতাবাড়ি স্টেশনে ইউপি সদস্য সরওয়ার কামালের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর ইউপি সদস্যের নির্দেশে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়।

গ্রাম পুলিশের সদস্য আমান উল্লাহ ওরফে বাবু একে একে ১০০টি বেত্রাঘাত করে তার উপর। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়লে দ্রুত খালী স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আকতার মিয়া দাবি করেন, খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার পর সেখানে উল্লেখ করা হয় তিনি ঘটনার বিষয়ে কারো কাছে মুখ খুলতে পারবেন না। কিন্তু ইউপি সদস্য ওই ঘটনা করেই ক্ষান্ত হননি। পরে তাকে বিভিন্ন সময় ধরে নিয়ে গিয়ে কোন কারণ ছাড়াই টর্চার করা শুরু করেন। কিছুদিন আগে তাকে সিএনজি অটোরিক্সাতে তুলে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে উখিয়া থেকে তার ভোটার আইডি কার্ড ও টিপসই ব্যবহার করে একটি সিম উত্তোলন করে ইউপি সদস্য। ওই সিম ব্যবহার করে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধ করে যাচ্ছেন ইউপি সদস্য। সেকারণে প্রাণনাশের ঝুঁকিতে পড়েছেন ভুক্তভোগী আকতার মিয়া।

তিনি দাবি করেন, ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বাদশা তাকে প্রায় সময় হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। যেকোনো সময় তাকে হত্যা করে মরদেহ গুম করতে পারে বলে আশঙ্কা তার। ইউপি সদস্যের হাত থেকে বাঁচতে আকুতি নিরীহ আকতারের।

ভুক্তভোগীর পিতা হাজী সুলতান আহমেদ বলেন- শত শত মানুষের সামনে বেধরক মারধর করার পর কাউকে এ ঘটনা না জানানো মর্মে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বাদশা। একই সঙ্গে সিমটি নিয়ে ফেলেন। সরকারের বিশেষ ভাতার টাকা ওই নাম্বার থেকে উঠিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে। এ নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বরাবর আমি লিখিত অভিযোগ দায়েরের কথা জানান।

গ্রাম পুলিশের সদস্য আমান উল্লাহ ওরফে বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক আগের ঘটনা তাই স্পষ্ট মনে করতে কষ্ট হচ্ছে। এক পর্যায়ে তিনি দাবি করেন, ইউপি সদস্য সরওয়ারের নির্দেশে তিনি পিটিয়েছিলেন। ইউপি সদস্যের নির্দেশে এভাবে নির্যাতন করা যায় কিনা প্রশ্ন করলে তিনি দাবি করেন, ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান নির্দেশ দিলে তারা যেকোনো লোকজনকে পেটাতে বাধ্য হন।

গ্রাম পুলিশ সদস্য ঘটনা স্বীকার করলেও ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বাদশা।

একের পর এক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ভুক্তভোগী আকতার মিয়া। প্রাণভয়ে এতদিন মুখ খুলতে না পারলেও ধারাবাহিক নির্যাতনের ফলে দেয়ালে পিট ঠেকে যাওয়ায় বিষয়টি সামনে এনে প্রাণে বাঁচতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক এস এম ফেরদৌস ইসলাম জানান, আপনার থেকে এ মাত্র বিষয়টি শুনলাম৷ ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইএইচ