তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শরীয়তপুরের শ্রমিক সংকটে মাঠের পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। দেড় থেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়েও ধান কাটা শ্রমিকদের এমন সংকটে সাত ভাগের এক ভাগ ফসলের বিনিময়ে অন্যান্য জেলার শ্রমিক দিয়ে বোরো ধান ঘরে তুলতে হচ্ছে শরীয়তপুরের কৃষকদের।
শনিবার শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার ফসলি মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জেলার কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৈশাখ মাসের শুরু থেকে দেশের অন্যান্য জেলার মতো শরীয়তপুরেও শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গত দুই তিন দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হলেও ব্যতিক্রম শরীয়তপুরের চিত্র। অনাবৃষ্টির সঙ্গে তীব্র তাপ প্রবাহের গরমে দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেলার কৃষক ও শ্রমিক। এর মধ্যে চলছে বোরো ধান ঘরে তোলার মৌসুম। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দেড়গুণ বেশি পারিশ্রমিকের প্রস্তাবেও জেলার শ্রমিকরা হিট স্ট্রোকের ভয়ে মাঠে নেমে ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না। মাঠের পরে মাঠ জুড়ে বোরো ধান পেকে সোনালী রঙের হয়ে থাকলেও শ্রমিক সংকটে এসব ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা।
তীব্র গরমের কারণে কৃষকদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সন্ধ্যার পরে টর্চ লাইটের সাহায্যে ধান কাটার জন্য। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদিত ধান এভাবে কাটা সম্ভব হয়নি কৃষকদের দ্বারা। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে এ বছর জেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪০ ভাগ ধান ঘরে তুলতে পেরেছে কৃষকরা। বাকি ৬০ ভাগের মধ্যে ২০ ভাগ ধান এখনো কাঁচা। তবে শ্রমিক সংকট চরম আকার ধারণ করায় জেলার কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের সাত ভাগের এক ভাগ ধানের বিনিময়ে খুলনা, সাতক্ষীরা, রংপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়িসহ অন্যান্য জেলার শ্রমিক দিয়ে ধান ঘরে তুলে নিচ্ছে। জেলায় শ্রমিক সংকট না থাকলে এভাবে ধান কাটতে হতো না কৃষকদের।
গোসাইরহাট উপজেলার ধীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল রসিদ সর্দার। এ বছর তিনি ৮৫০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে তিনি রাজবাড়ি জেলার শ্রমিকদের দায়িত্ব দিয়েছেন ধান কাটতে। ধান কাটার পরে মোট ধানের সাত ভাগের এক ভাগ ধান তারা পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়ে যাবেন।
তিনি আমার সংবাদকে বলেন, কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করেছি। তীব্র গরমে শ্রমিক সংকটে পড়ে রাজবাড়ি জেলার শ্রমিকদের দিয়ে ধান ঘরে তুলছি। তারা যদি টাকা নিতো, তাহলে ভালো হতো। কিন্তু তারা সাত ভাগের এক ভাগ ধান নিয়ে যাবেন।
রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার চর ধীকুরি গ্রাম থেকে ধান কাটতে এসেছেন আলিমুদ্দিন সর্দার। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, বউ বাচ্চা রেখে তীব্র গরমে অন্য জেলায় ধান কাটতে এসেছি। ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দেওয়ার পরে সাত ভাগের এক ভাগ ধান আমি পাবো। ধারণা করছি এবছর আমি ৮০ থেকে ৯০ মণ ধান নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব।
আরেকজন শ্রমিক লালন মন্ডল গান গাইতে গাইতে কাটছেন ধান। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, পরিবার রেখে ৩ দিন ধরে শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ধান কাটার কাজ করছি। আমার দলে ১৪ জন শ্রমিক রয়েছেন। আমরা ৭ জন করে দুই ভাগে কাজ করছি। এলাকায় কাজ কম বলে তীব্র গরম উপেক্ষা করে এখানে এসেছি ধান কাটতে। যার ধান কাটতে যাই, তিনি আমাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রত্যেক শ্রমিকের লক্ষ্য থাকে ১০০ মণ ধান নিয়ে বাড়ি ফেরা।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রফিকুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে এ বছর বোরো ধানের মৌসুমে শ্রমিক সংকট চলছে। অন্যান্য জেলার অবস্থাও একই রকম। যদিও অন্যান্য বছরেও এমন সংকট দেখা যায়। শরীয়তপুরে বিভিন্ন জেলার শ্রমিক এসে ধান কর্তন করছেন। বোরো ধানের জমির মালিকরা এসব শ্রমিকদের সঙ্গে ধান ও টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে থাকেন। কৃষকদের ধান ঘরে তুলে দিয়ে শ্রমিকরা সাধারণত সাত ভাগের এক ভাগ ধান নিয়ে থাকেন। জেলায় শ্রমিক সংকট না থাকলে এমনটা হতো না।
ইএইচ