টাঙ্গাইলে কৃষি বিভাগ কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।
দৈনিক মজুরির শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের চেয়ে সময় এবং খরচ কম হওয়ায় দিন দিন এ মেশিনের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। ফলে জেলার কৃষকরা শ্রমিক সংকট কাটিয়ে উঠে কম সময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৭৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এক লাখ ৭৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। বোরো ধানের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ধানের ফলন বৃদ্ধি করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মৌসুমের প্রায় পুরো সময় জুড়ে প্রখর রোদ থাকলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে গতবারের চেয়ে ধানের ফলন বেশি হয়েছে। জমির সঠিক পরিচর্যা ও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এবার জমিতে পোকা-মাকরের আক্রমণ নেই বললেই চলে। প্রখর রোদ থাকায় ইতোমধ্যে জমির ধান পাকছে। কৃষকরা জমি থেকে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর, বাসাইল, নাগরপুর, সখীপুর, কালিহাতীসহ সব উপজেলার বোরো জমির ফসল ঘরে তুলতে কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। দিন দিন কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়া বাড়ছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে চলছে ফসল কাটার ধুম।
কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। শ্রমিক সংকট ও বাড়তি মজুরির কারণে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তিনি জমির ধান কাটছেন। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন পাওয়ায় শ্রমিক পাওয়ার বাড়তি দুশ্চিন্তা যেমন দূর হয়েছে তেমনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন। পাশাপাশি ধান কাটার খরচও অর্ধেকে নেমে এসেছে। যেখানে দৈনিক মজুরির শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগছে। সেখানে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে লাগছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
কৃষক আনোয়ার মিয়া জানান, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটায় তাদের খুব উপকার হচ্ছে। দৈনিক মজুরির শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খচর হয়। সেখানে মেশিন আসার ফলে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটায় দৈনিক মজুরির শ্রমিকের চেয়ে বিঘাপ্রতি তার চার হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
তিনি জানান, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে বস্তাবন্দি না করে বাতাসে ঠান্ডা করে বস্তাবন্দি করলে ধানের গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে।
অপর কৃষক মুনু মিয়া জানান, এ মৌসুমে ধান কাটার জন্য এলাকায় দৈনিক মজুরির কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা দেয়। তাছাড়া তাদের দিয়ে ধান কাটায় খরচ অনেক বেশি। এই ধরনের মেশিন ব্যবহারে তাদের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। সময় কম লাগছে- আবার টাকাও কম খরচ হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জানান, চারিদিকে এখন পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ। চলতি মৌসুমে উৎপাদিত ধান থেকে সাত লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের আগেই সকল জমির পাকা ধান যাতে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারে কৃষি
বিভাগের পক্ষ থেকে সে পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক চাষাবাদের জন্য যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। জেলায় বোরো মৌসুমের আবাদের ২০ ভাগ ধান ইতোমধ্যে কাটা শেষ হয়েছে। চলতি মাসে জেলায় আবাদের পুরো ধান কাটা শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ইএইচ