বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত চলনবিলের কৃষক

নাটোর প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত চলনবিলের কৃষক

চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রামের ধান ক্ষেতগুলোতে সারাদিনই কৃষকদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ছে।

ভোরবেলা থেকেই শুরু হয় তাদের ব্যস্ততা। ধান কেটে থ্রেসার মেশিনে চলে ধান মলার কাজ। দুপুরের মধ্যেই ধান মলার কাজ সারতে চায় তারা। তীব্র রোদে ক্লান্ত হওয়ার আগেই কৃষকেরা ধান ঘরে তুলতে চায়। তাই তাদের যেন কোন ফুরসত নেই।

গুরুদাসপুরের কৃষক আজাহার আলী, হোসেন মিয়া জানান, তারা ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন পেয়েছেন বিঘা প্রতি ২৩ মণ। খরা আসার আগেই ধানে ফুল এসেছিল বলে ফলন ভালো হয়েছে।

সিংড়ার কৃষক তমিজ উদ্দীন, রাসেল জানান, এবার কিছু দেরিতে বোরো ধানের চারা রোপণের কারণে ফুল আসতে দেরি হয়েছিল। খরার কবলে পরে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তারা ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ২২ মণ করে ধান পেয়েছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হারুনুর রশিদ জানান, এ উপজেলায় ৫ হাজার ৫৯০ হেক্টরের বিপরীতে ৫ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষাবাদ হয়েছে। চলনবিলের এই অংশে ভালো ফলন হয়েছে। ৪০ শতাংশের কিছু বেশি বোরো ধান কাটা হয়েছে। কিছু জমিতে দেরিতে ফুল আসায় তা কাটতে দেরি হবে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার জানান, এবার ৩৬ হাজার ৫৯০ হেক্টরের বিপরীতে ৩৬ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগ অর্থাৎ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র একটিই জাত জিরাশাইল ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ উপজেলার ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় এখনও বোরো ধান কাটা চলছে। যেসব বোরো ধানের গাছে দেরিতে ফুল আসছে, সেগুলোতে তাপদাহের কারণে সামান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে পারলে কোনো সমস্যা থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশের কিছু বেশি ধান কর্তন হয়েছে। এবার বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৩ মণ হারে ফলন হচ্ছে।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৬১ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৯ মেট্রিক টন চাল। আর ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন।

গত মৌসুমে জেলায় ৫৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছিল ৬১ হাজার ২০৪ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ২ হাজার ৪৯৪ হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল।

অন্যদিকে মোট উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন চাল আর ৪ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন ধান। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারও এই এলাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

ইএইচ