কুষ্টিয়ায় আনসারে অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
কুষ্টিয়ায় আনসারে অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ

দেশের তৃণমূল পর্যায়ের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নসহ সংকটময় মুহূর্তে  প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশ গ্রহণে গড়ে উঠা আনসার বাহিনীর অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা থাকায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থাকলেও মুখ খুললেই অবধারিত শাস্তির ভয়ে চুপ থাকেন সবাই। নির্বাচন কমিশনের ভোট কার্যক্রমে সদস্য সনদ জালিয়াতি ও বিপুল অঙ্কের টাকা চাঁদাবাজির মাধ্যমে আনসার কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হয়।

এসময় প্রতিজনের কাছ থেকে ১হাজার ৫শ থেকে ২হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম জমা নিয়ে কাজ পাওয়ার তালিকা নিশ্চিত করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। হিসেব মতে গেলো জাতীয় সংসদ এবং চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া জেলার ৫শতাধিক ভোট কেন্দ্রে প্রতিবার নিযুক্ত করা হয় প্রায় ১০ হাজার কর্মী। এসময় সকল কর্মীদের কাছ থেকে মাঠ পর্যায়ের দলনেতাদের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন জেলা আনসার কর্মকর্তাগণ। 

৭মে, দুপুরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চত্বরে নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ ও কর্মস্থল বুঝে নিতে আসা আনসার সদস্য আব্দুল বারেকের সাথে প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি জানান, ‘পিসি এপিসির মাধ্যমে নির্ধারিত টাকা অগ্রিম দিয়ে নাম তালিকাভুক্তি কনফার্ম করতে হয়েছে। সংগৃহীত এসব টাকা আনসার অফিসের নির্ভরযোগ্য ভাতাভোগী ৫জন আনসার সদস্য যথাক্রমে জেসমিন, ঈশিতা,  আবুল কালাম, সাইদুর রহামন ও মাসুম বিল্লাহ উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে বড় কর্মকর্তাদের কাছে চলে যায়’।

সদর উপজেলার উজানগ্রামের বাসিন্দা আনসার সদস্য রুবিনা খাতুন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানায়, ‘একেনে দ্যাকেন প্রায় অদাঅদি (অর্ধেক) নারীরা আনসারের ডিউটি কত্তি আইচে, ইরা সবাই খুব অভাবি সুংসার, এই এক দুইদিন ডিউটি কইরি যদি কিচু টেকা আসে তালিতো সুংসারে ইকটু আয় বরকত হয়। সেজন্যিই সবাই আসে। কত ক্যাম্মা কি দিবিনি একনও বুলিনি। দেখি কয়টেকা দেয়। আগেই তো পোনোরো শো টেকা দিয়ে নাম লেকাতি হইচে। এডি বন্ধ হওয়া দরকার, কাম করবো আমি, কষ্ট করবো আমি, সেই টেকার ভাগ অন্যলোকেক দিতি হবি ক্যা’?

এইদিন উপজেলা চত্বরে প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় ভাতাভোগী আনসার সদস্যা ঈশিতা খাতুনের। তিনি টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণের সদস্য সনদ জালিয়াতিসহ চাঁদার টাকা সংগ্রহকারী এমন অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেন, ‘এখানে আমার কিছু কাজ না, আমাদের মোস্তাফিজ স্যারের কিছু কাজ আমি করে দিচ্ছি মাত্র’। এসময় তিনি স্বীকার করেন, তিনি যে কাজটি করছেন সেইকাজ মোট ৫জন ভাতাভোগী সদস্যদের দিয়ে স্যারেরা করান। এসময় একই কথা জানান অপর আনসার সদস্য জেসমিন আক্তার। তবে প্রতিবেদকের আগমন টের পেয়ে অপর তিন সদস্য গা ঢাকা দেন সদর উপজেলা চত্বরে সমবেত তিন হাজার আনসার সদস্যের ভিড়ে।  

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান তার দপ্তরে প্রতিবেদককে জানান, ‘এসব অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা। যারা ডিউটি না পেয়ে বাদ হয়েছে তারাই এই ধরনের উল্টা পাল্টা অভিযোগ দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কুষ্টিয়ার জেলা কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্র দত্ত জানান,‘বিধি বহির্ভূত কোন কাজ করার সুযোগ আনসারে নেই। এধরনের শোনা কথার অভিযোগ আমার কানে এসেছে। তবে এবিষয়ে আমি কারো কাছ থেকে কোন সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তার তদন্ত করে দেখা হবে এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত ব্যক্তি যেই হোন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিবারই ভোটকেন্দ্রে আনসারদের একদিনের কর্মশালসহ ৬দিনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতি একদিনের জন্য সাধারণ আনসার সদস্যরা ১হাজার এবং পিসি এপিসিদের ১হাজার ৫০টাকা হারে ভাতা দেয়া হয় বলে জানালেন এই জেলা কমান্ড্যান্ট। আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ডিউটি শেষে প্রত্যেকের রকেট নাম্বারে প্রাপ্য টাকা চলে যায়’। 

প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে আনসারের মধ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল উৎপাটনসহ অর্জিত শুদ্ধতায় পুঞ্জীভূত ক্ষোভের নিরসন এখন সময়ে দাবি বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

আরএস