ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

ফেনী প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারি উদ্যোগ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছিল। যদিও যথাযথ প্রচার-প্রচারণার অভাবে শুরু থেকেই এ কার্যক্রম তেমন একটা আলোর মুখ দেখেনি।

এরপরও এবার চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি বকেয়া, চিকিৎসক সংকট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে এ বিশেষ সেবা কার্যক্রমে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। এতে একজন সিনিয়র কনসালটেন্টের পরামর্শ ফি ৪০০ টাকা, জুনিয়র কনসালটেন্টের ৩০০ টাকা, এমবিবিএস-বিডিএসের ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

এ কার্যক্রমে সরকার নির্ধারিত পরামর্শ ফি থেকে একটি অংশ সম্মানী হিসেবে চিকিৎসকরা পাওয়ার কথা থাকলেও গত ৬ মাস ধরে চিকিৎসকরা ওই টাকা পাচ্ছেন না। এতে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে চিকিৎসকদের মাঝে দেখা দিয়েছে অনীহা। ফলে গত চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এ হাসপাতালের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের শিশু বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, সকাল থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী দেখতে হয়। সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় বহির্বিভাগে সবসময় রোগীর অনেক চাপ থাকে। এরপর বিকালে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখলে যে টাকা পাওয়া যায় তার অনেক কম টাকা পাওয়া যায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায়। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে আমরা সেই টাকাটাও পাচ্ছি না। তাই এটি যেহেতু চাকরির অংশ নয়, টাকা না পেলে কেন আমরা বাড়তি কাজ করব?

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট জামাল উদ্দিন বলেন, প্রথম কয়েকমাস পরামর্শ ফি থেকে টাকা পেলেও বেশ কয়েক মাস ধরে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। সব ক্ষেত্রেই পারিশ্রমিক ছাড়া কেউই পরিশ্রম করতে চাইবে না।

হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. ব্রজ গোপাল পাল বলেন, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাকে মাসে একদিন চেম্বার করতে হয়। এজন্য সরকার নির্ধারিত ফি থেকে একটি অংশ সম্মানী হিসেবে চিকিৎসকরা পেয়ে থাকেন। গত ৩-৪ মাস ওই টাকা পাইনি। টাকা কেন দেওয়া হচ্ছে না সেটিও আমাদের অজানা।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. আসিফ ইকবাল বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ৬-৭ জন চিকিৎসক বদলি হয়েছে। যার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন করে চিকিৎসক পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ থাকবে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি বলেন, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কারণে এটি আপাতত বন্ধ বা ধীরগতিতে চলছে। যে নির্দেশনার ভিত্তিতে এতদিন সেবা কার্যক্রম চলেছে সেটি পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে। এইজন্য সেবা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

চিকিৎসকদের পরামর্শ ফির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল আমরা সেই অনুযায়ী চিকিৎসকদের টাকা দিয়েছি। এখন আবার আমাদের ওই টাকা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কে কত টাকা পাবে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের মাধ্যমে নতুন আরেকটি প্রজ্ঞাপন হবে। সে অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। এতদিনের সব টাকাই সংরক্ষিত আছে। আদেশ পেলে সবাইকে দিয়ে দেওয়া হবে।

ইএইচ