টাকা নিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করায় পোলিং অফিসারকে মারধর

জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
টাকা নিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করায় পোলিং অফিসারকে মারধর

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ করা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।

জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়া চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজি ও তার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নানা সময়ে এ নিয়ে জাজিরায় তৈরি হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। এসব কারণে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনামও হয়েছেন তারা।

এবার টাকা নিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করায় এক পোলিং অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মোটরসাইকেল প্রতীকের ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

রোববার রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকে নগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে জাজিরার শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে জাজিরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে ২৫নং বিকে নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আবু সাইদ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। পোলিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ নিয়ে রোববার রাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী বিকে নগর বাজারে গিয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে অজ্ঞাত এক যুবক মীর আবু সাইদকে বাজারের এক পাশে ডেকে নিয়ে যায় বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সর্দার, আব্দুল আলী সর্দার ও মজিবুর বানিয়ার কাছে।

এ সময় সাইদুর রহমান সরদারসহ অন্যান্যরা মীর ইমরান আলীকে নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিনিময়ে তাকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। সরকারি কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি হিসেবে মীর আবু সাইদ এমন প্রস্তাবে রাজি হননি।

এরপর সাইদুর রহমান সর্দার, আব্দুল আলী সরদারসহ অন্যান্যরা মীর আবু সাইদকে মারধর করেন। খবর পেয়ে মীর আবু সাইদের স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছেন মীর আবু সাইদ। এ ঘটনায় জাজিরা উপজেলার শিক্ষকসহ অন্যান্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পোলিং অফিসার ও শিক্ষক মীর আবু সাইদ বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। প্রশিক্ষণ শেষে আমি বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এ সময় ব্যক্তিগত কাজে বাজারে গেলে একজন লোক আমাকে ডেকে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ অন্যান্যদের কাছে। তারা আমাকে টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এরপর তারা আমাকে মারধর করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি আমার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অভিযোগ দেব।

অভিযুক্ত মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ও বিকে নগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সর্দার বলেন, আপনি কোথা থেকে বিষয়টি জেনেছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না। মীর আবু সাইদ এমন কোনো বংশের ছেলে নয় যে, তাকে ম্যানেজ করতে পারলে একশ ভোট পাওয়া যাবে। হতে পারে সে সরকারি চাকরিজীবী ও পোলিং অফিসার। তার সঙ্গে আমাদের কারও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির মোবাইল নাম্বারে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আক্তার সুমি বলেন, আমরা সরকারি চাকরি করি। সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করাই আমাদের কাজ। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কারও পক্ষ নিয়ে কাউকে রাজনৈতিক ভাবে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও আইনগত ভাবে অন্যায়। আমাদের শিক্ষক মীর আবু সাইদ এমন একটি প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভাবে অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করব। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই আমি।

বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই, তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ