গোদাগাড়ীতে আবারও রাসেল ভাইপার আতঙ্ক

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৪, ০২:১১ পিএম
গোদাগাড়ীতে আবারও রাসেল ভাইপার আতঙ্ক

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় আবারও বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত কৃষকরা।

মাঠজুড়ে বোরো ধানের ক্ষেতে প্রায়ই দেখা মিলছে বিষধর রাসেল ভাইপারের। চলতি মাসে প্রায়টি ১০টি রাসেল ভাইপার সাপকে পিটিয়ে মেরেছে কৃষকরা। এর মধ্যে সামাউন নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০১৩ সালে হঠাৎ দেখা মেলে রাসেল ভাইপার সাপের। এরপর ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ব্যাপকভাবে তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী এবং তানোর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। সাপের কামড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুও হয়।

২০১৭ ও ২০১৮ পর ২০১৯ সালে আবারো রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব দেখা দেয়। ২০২০,২০২১,২০২২ ও ২০২৩ সালে এ সাপের উপদ্রব কম দেখা গেলেও চলতি বছর ফের গোদাগাড়ীতে উপদ্রব বেড়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলার পোতাহার পালাসা, গোদাগাড়ী পৌর এলাকার সুলতানগঞ্জ কাছারি পাড়া, কুঠিপাড়া, বারুইপাড়া কেশবপুর, সাহাপুকুর, পাহাড়পুর, ধনঞ্চয়পুর, গোমা, চালনা, ভূষণা, রিশিকুল গ্রামে রাসেল ভাইপার দেখা গেছে। গোদাগাড়ীর মাঠে মাঠে এখন ধান কাটা মাড়াই চলছে। ধানের ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে বিষধর এ সাপ। ফলে মাঠে ধান কাটা থেকে অন্যান্য কাজে মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোদাগাড়ী ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামের বাসিন্দা সামাউন গত (৫ মে) বুধবার পদ্মা নদীর উপরে পাকা ধান কাটতে গিয়ে রাসেল ভাইপারের কামড়ে সাথে সাথে তার মূত্যু হয়। (১৮ মে) মঙ্গলবার পোতাহার (পালসা) সকাল ৬টা সময় ধান ক্ষেতে কৃষকরা রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেলে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। (১৬ মে) রোববার গোদাগাড়ী পৌরসভার সুলতানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে সারাংপুর কাচারীপাড়া কৃষকরা বোরো পাকা ধান কাটছিল এ সময় ফারুক আহমেদ নামে এক কৃষক সাপটি দেখতে পেলে সবাই মিলে সাপটি পিটিয়ে মেরে ফেলে।

গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসিদুল হক গণি মাসুদ বলেন, ‍‍`২০১৫ সালের দিকে রাসেল ভাইপার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক বছর উৎপাত কম ছিল। কিন্তু এখন মাঠে প্রচুর সাপ দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, খবর এসেছে এলাকার মানুষ আতঙ্কে মাঠে চলাফেরা করতে পারছেন না। ঘরবাড়িতেও খুব সতর্ক হয়ে বসবাস করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, মাঠে সাপের উৎপাতের বিষয়টি আমি শুনেছি। কৃষকরা আমাদের কাছে বিষয়টি বলছেন। আমরা তাদেরকে ভীত না হতে বলেছি। মাঠে ধানক্ষেতে যাওয়ার জন্য লাঠি রাখার পরামর্শ দিয়েছি। কয়েকজনকে কৃষককে ড্রাম বুট দেওয়া হয়েছে। এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও স্যার কৃষকদের জন্য একটি প্রকল্প করে ২৫-৩০ হাজার কৃষককে ড্রাম বুট (জুতা) দেয়া হবে তিনি জানান।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ হাসান তারিক বলেন, রাসেল ভাইপারে কামড়ালে রোগীর দ্রুত কিডনি অকেজো হতে শুরু করে। শরীরে জ্বালাপোড়া করে এবং কামড়ানোর স্থানে পচন ধরে। রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে রোগীকে বাঁচানো অসম্ভব হবে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে রাসেল ভাইপারের এন্টি ভেনম থাকলেও তা সেভাবে কাজ করে না। ২০১৫ সালের দিকে আমরা যখন প্রথম রাসেল ভাইপারে কামড়ানো রোগী পেয়েছিলাম, দ্রুত চিকিৎসা না করানোয় তাদের কামড়ানোর স্থান হাত-পা কেটে ফেলেও রোগী বাঁচাতে পারিনি।

ইএইচ