বরিশালে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে প্রচারণা

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
বরিশালে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে প্রচারণা
  • বরিশাল বিভাগে ৩ হাজার ৯৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
  • পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত
  • বরিশাল বিভাগজুড়ে সাড়ে চার শতাধিক মেডিকেল টিম গঠন
  • বরিশাল নদী বন্দর থেকে সকল নৌচলাচল বন্ধ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল ধেয়ে আসছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে। এর প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে সকাল থেকে হালকা থেকে মাঝারি দমকা হাওয়া বইছে। আকাশ মেঘলা রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরার জেলে নৌকা ও ট্রলারগুলো উপকূলে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ জারি করা বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রোববার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে মোংলা বন্দরের কাছ থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে রোববার সকাল থেকেই বরিশালের বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকেরা সংকেত প্রচার করছেন। তারা লোকজনকে সতর্ক করার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বরিশাল নগরের নদী তীরের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বরিশাল ও খুলনা উপকূলের জেলাসমূহে ১০ নম্বর বিপৎসংকেত জারি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে নতুন করে ৯ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে হবে।

বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা বশির উদ্দীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছের এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বরিশালে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এটি আজ সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে মোংলা বন্দরের পাশ দিয়ে খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বরিশাল বিভাগে ৩ হাজার ৯৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ৬ হাজার ২৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১ হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগকালীন চিকিৎসাসেবা দিতে বরিশাল বিভাগজুড়ে সাড়ে চার শতাধিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বিভাগের হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বিভাগের ছয় জেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবকও প্রস্তুত রয়েছেন।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যে ৪৭২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যারা দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেবে।

সিপিপির বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক শাহাবুদ্দিন মিঞা বলেন, সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বরিশাল সদরে ৬০ জন রয়েছে। এ ছাড়া ভোলায় ১৩ হাজার ৬০০, পটুয়াখালীতে ৮ হাজার ৭০০, বরগুনায় ৮ হাজার ৪৪০, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ১ হাজার ৭০০ জনসহ ৩২ হাজার ৫০০ জন সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় সংকেত প্রচার, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়াসহ প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন।

বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলার ৫৪১টি আশ্রয়ণকেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত বহুতল ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। সিপিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বরিশাল নদীবন্দর থেকে নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণসহ দূরপাল্লা রুটের সব ধরনের ছোট-বড় লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ থাকবে। টার্মিনাল এলাকায় সকাল থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং করছেন নৌ পুলিশ ও কোস্টগাডের্র সদস্যরা।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

ইএইচ