বরিশালে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষতি নিরূপণ: ক্ষতিগ্রস্ত পৌনে ২ লাখ কৃষক

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৪, ০৩:১১ পিএম
বরিশালে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষতি নিরূপণ: ক্ষতিগ্রস্ত পৌনে ২ লাখ কৃষক
  • পান চাষে ক্ষতি ৯৮ কোটি টাকা
  • ৯৩ হাজারের বেশি পুকুর-দিঘী-ঘের ক্ষতিগ্রস্ত
  • বিভাগে মৎস্য সম্পদের ক্ষতি ২১৭ কোটি টাকা
  • ৩৫ চালের আড়তে কোটি টাকার ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে গোটা বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮১ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী গতকাল বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো ওই তথ্যে জানানো হয়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক রয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো। আর বিভাগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রিমাল ও অতিবৃষ্টির কারণে ৯০ হাজার ৭৯৮ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমি।

এছাড়াও আংশিক থেকে ১৫ হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে ১৮ হাজার ২০৯ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তের হিসাবে গিয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে আউশ (বীজতলা ও আবাদসহ), চিনা বাদাম, মরিচ, মুগ, তিল, শাক সবজি, পাট, পান, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল রয়েছে। আর এতে উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে বরিশাল জেলায় ১১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে শুধু কৃষি খাতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ি বরিশালের উপপরিচালক মো. মুরাদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ মে ও ২৮ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধিজনিত কারণে জেলায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি খাতের ১১০ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে শুধু পান চাষে ৯৮ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বরিশাল জেলায়।

তথ্য বলছে, জেলায় ২ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ রয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমির পান। এখান থেকে ৮৯৬ হেক্টর জমির পান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, মোটের ওপর শুধু পান উৎপাদনেই ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন হতে পারে। বরিশাল জেলায় প্রায় ৯ হাজার পান চাষি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পানের বাইরে আউশ ধানে ৯ হাজার ৭১১ কৃষক পরিবার, শাক-সবজিতে ৪ হাজার ১৭৫ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর কলা পেঁপেসহ সব ফসল মিলিয়ে জেলায় মোট ২৪ হাজার ৩০৫টি কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

এছাড়াও বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস আমার সংবাদকে বলেন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৯ হাজার ৮ হেক্টর পরিমাণ জায়গার ৯৩ হাজার ৮৮২ পুকুর, দিঘী ও ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়াও ২২ হেক্টর আয়তনের ১২০টি কাঁকড়া, কুচিয়া খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বিভাগের পুকুর, ঘের, স্লুইস গেটের মতো অবকাঠামোর ক্ষতি সাধনের পরিমাণ ৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর মৎস্য বিষয়ক সম্পদের মোট ক্ষতির পরিমাণ ২১৭ কোটি টাকার বেশি। খামার, পুকুর, দিঘী ও ঘেরের ক্ষতির কারণে বিভাগজুড়ে দেড়শ কোটি টাকার অধিকমূল্যের ৭ হাজার ৯২ মেট্রিকটন মাছের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ১৫৯ মেট্রিকটন চিংড়ি, প্রায় ৭ কোটি পোনা ও ৬৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া, কুচিয়ার ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে কোনো জেলে নিহত হননি। তবে ৩১ জন জেলে আহত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া সাড়ে ৩ কোটি টাকার অধিক মূল্যের ১ হাজার ১৯টি নৌযান (নৌকা/ট্রলার/জলযান) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসাথে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যে ৮৯৪টি জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গোটা বরিশাল শহর। যেসব জায়গায় বিগত দিনে পানি জমেনি, এবার সেসব স্থানও হাঁটু পানির নিচে ছিল। আর এই পানির কারণেই নগরের লাইন রোড ও চাউল পট্টি এলাকার অন্তত ৩৫টি আড়তের কয়েকশ টন চাল ভিজে গেছে।  

ইএইচ