কিশোরগঞ্জে বিজিবির ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেজে শিক্ষকের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারী সহ ৪ জন।
গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ৯ টায় শহরের পূর্বতারা পাশা এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন,বিজিবির ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারী ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার ডৌহখনা কাদিরন এলাকার মৃত আ:খালেক এর ছেলে আবুল খায়ের (৪৫),কিশোরগঞ্জের গাইটাল নামাপাড়া এলাকার শরীফ উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়া (৩২),লতিফাবাদ ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার মৃত আ:কুদ্দুছের ছেলে মো:বিল্লাল (৪৮) ও বৌলাই ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজকুন্তি এলাকার আবু তালেবের ছেলে মো:তাজুল ইসলাম (৩০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,শহরের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফজলুল হকের স্ত্রী কিশোরগঞ্জ টিটি কলেজের প্রভাষক রেদুয়ানা আক্তার জেসমিনের নামে যশোদল দামপাটুলী এলাকায় ৬৯ শতাংশ জায়গায় হক পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে।তারা জমি সহ এ পোল্ট্রি ফার্মটি বিক্রি করার চেষ্টা করে আসছে।
গত ২২ মে দুপুরে ৪ জন অপরিচিত লোক ওই শিক্ষকের পোল্ট্রি ফার্মে আসে।তাদের মধ্যে একজন নিজেকে বিজিবি`র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দেয় এবং প্রমাণ হিসাবে তার মোবাইলে বিজিবি`র ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি দেখায়।এ সময় ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়ধারী আবুল খায়ের ওই শিক্ষকের হক পোলট্রি ফার্মটি কিনবে বলে জানায়।এবং পোল্ট্রি ফার্মটি তার খুব পছন্দ হয়েছে বলে জানায়।এও বলে যে,টাকার জন্য কোন চিন্তা করবেন না।তার অনেক টাকা পয়সা আছে।এ সময় অভিযুক্ত বাকি ৩ জন ওই শিক্ষককে বলে,স্যার প্রচুর টাকার মালিক। টাকার জন্য আপনি কোন চিন্তা করবেন না।পরে ওই শিক্ষক তাদের কথায় বিশ্বাস করে তাদেরকে পূর্বতারাপাশা কাজীবাড়ী এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যায় এবং তাদেরকে দুপুরের খাবার খাওয়ায়।এ সময় অভিযুক্তরা শিক্ষকের বাসায় বসে জায়গার যাবতীয় কাগজপত্র দেখে এবং ফটোকপি তাদেরকে দিতে বললে শিক্ষক তাদেরকে কাগজ পত্রের ফটো কপি দেয় এবং জায়গার দরদাম ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।পরে অভিযুক্তরা ঐ দিন সন্ধ্যা ৬ টার সময় শিক্ষকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। পরের দিন ২৩ মে দুপুর সাড়ে ১২ সময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষককে ফোন করে শহরের গাংচিল রেস্টুরেন্টের দু-তলায় আসতে বললে তিনি তাদের কথা মত গাংচিল রেস্টুরেন্টের দু-তলায় আসে।গাংচিল রেস্টুরেন্টে বসে তারা দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে।
তখন ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারী আবুল খায়ের লোকটি ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হওয়ায় সে ওই শিক্ষকের ব্যাংকের লোনের লাভ ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা মওকুফ করে দিবে বলে ওই শিক্ষকের স্ত্রীর কাছ থেকে একটি দরখাস্ত নেয় এবং ইসলামি ব্যাংক লি. এর প্রধান শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা মওকুফ হয়েছে বলে জানায়। এ সময় হেড অফিসের ফাইল প্রসেসিং এর খরচ দেখিয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে নগদ ১৬ হাজার টাকা নেয়। এইভাবে অভিযুক্তরা শিক্ষকের বিশ্বাস অর্জন করতে থাকে।অভিযুক্তরা শিক্ষকের টাকা,পয়সা ধন সম্পত্তি কেমন আছে তা গোপনে পর্যবেক্ষণ করে তাদের টোপে ফেলানোর চেষ্টা করতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত ২৪ মে বিকাল ৫ টায় শিক্ষকের বাসায় যায়। এ সময় তারা ওই শিক্ষককে এসি গাড়ী যোগে নেত্রকোণা যাওয়ার জন্য বার বার প্রস্তাব দেয় এবং নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ভুক্তভোগী শিক্ষক তার শরীর ভাল না থাকায় তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় অভিযুক্তরা ঐদিন রাতে শিক্ষকের বাসায় রাত্রি যাপন করে এবং পরের দিন ২৫ মে সকাল ১০ টার সময় অভিযুক্তদের কথামতো আমিন দিয়া জায়গা মেপে বুঝে নেয় এবং শিক্ষকের বাসায় দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে পরের দিন জমি রেজিস্ট্রি করার কথা বলে।অভিযুক্তরা যাওয়ার ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দানকারী তার সঙ্গে থাকা লোকদেরকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে শিক্ষকের কাছ থেকে হাওলাত ২২ হাজার টাকা চায়।ভুক্তভোগী শিক্ষক তার কথায় বিশ্বাস করে অভিযুক্ত আবুল খায়েরকে ২২ হাজার টাকা হাওলাত দেয়। অভিযুক্তরা যাওয়ার পর ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারীর দেয়া বিকাশ নম্বর চেক করে ভুক্তভোগী শিক্ষক দেখতে পান বিকাশ নম্বরটি ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দেয়া আবুল খায়েরের নিজের। তখন ভুক্তভোগী শিক্ষক ফজলুল হক বুঝতে পারেন অভিযুক্তরা তার সাথে প্রতারণা করছে।
প্রতারণার বিষয়টি বুঝার পরও তাদের সাথে ওই শিক্ষক স্বাভাবিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখে।এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রবিবার ২ জুন রাত ৯ টার সময় অভিযুক্তরা জমির বায়া দলিল ও কিছু খরচের টাকা নেয়ার জন্য পুনরায় ওই শিক্ষকের বাড়িতে আসলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের আটক করে।আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযুক্তরা ভুয়া পরিচয় প্রদান এবং তাদের প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে।
পরে বিষয়টি কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।ভুক্তভোগী শিক্ষক ফজলুল হক জানান,অভিযুক্তরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমার জায়গা কেনার কথা বলে আমার ফার্মে এসে একজন সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে আমার কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা জানান,এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দলের সক্রিয় সদস্য।এ ঘটনায় মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরএস