কোরবানির হাট কাঁপাবে দিনাজপুরের ৩৫ মণের রাজা

দিনাজপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৪, ০২:২৪ পিএম
কোরবানির হাট কাঁপাবে দিনাজপুরের ৩৫ মণের রাজা

এবার বিক্রি হবে দিনাজপুরের রাজা! তবে এ রাজা কোনো রাজ্যের রাজা নয়। এ হলো আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুতকৃত লালনপালন করা বিশাল সুঠাম দেহের একটি ষাঁড়ের নাম ‘দিনাজপুরের রাজা’।

সাদা-কালো রঙের সুঠাম স্বাস্থ্যের ষাঁড়টির শরীরের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, উচ্চতা ৬ ফুট। ওজন ৩৫ মণ অর্থাৎ ১৪০০ কেজি। ষাঁড়টির মালিকের আশা, দিনাজপুরের রাজাকে বিক্রি করবেন ১৮ লাখ টাকায়।

সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবারে নিজের বাড়িতে রাজাসহ ১০টি গরু লালনপালন করেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের মধ্যদূর্গাপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, প্রায় ৪ বছর পূর্বে ওই খামারেই ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি থেকে জন্ম নেয় রাজা। হলেষ্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাড়টিকে রাজার মতই লালন পালন করেছেন বলে খামারি রাজ্জাক তার নাম রেখেছেন ‘দিনাজপুরের রাজা’। বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি দেখার জন্য প্রতিদিন শতশত মানুষ ভিড় করছে ওই বাড়িতে।

ষাঁড়টি বাড়ি থেকে বের করতে ৪-৫ জন মানুষ সামলাতে হয়, হাটে আনা নেওয়া করা কষ্টকর তাই বাড়ি থেকেই রাজাকে বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান শৌখিন খামারি রাজ্জাক।

রাজার মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, জন্মের পর রাজাকে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন পালন করতে শুরু করেন তিনি। খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য খড়, ঘাস, ছোলা, মুসুরের ডাল ও ভুসি, ভুট্টার আটা, চোপড়, খুদের ভাত, খৈল, ধানের গুড়া ও চিটা গুড়। এতে প্রতিদিন রাজার খাবারের তালিকায় খরচ হয় ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা।

তিনি বলেন, মাঝে মাঝে তাকে কাঁচাকলা, গাজর, আপেলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলও খাওয়ানো হয়। থাকার জায়গায় ২৪ ঘণ্টা ৩টি ফ্যান দেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে হাত পাখা দিয়ে রাজাকে বাতাস করতে হয়। প্রতিদিন ৩-৪ বার গোসল করাতে হয়। প্রয়োজনমতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় দিনদিন গরুটির আকৃতি এবং ওজন বেড়ে ৪ বছরে বর্তমানে ৩৫ মণের (১ হাজার ৪০০ কেজি) এসে দাঁড়িয়েছে, যা ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে ওজন মাপা হয়েছে।

বর্তমানে তার ৬ দাঁত। এবার কোরবানি উপলক্ষ্যে রাজাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শৌখিন খামারি আব্দুর রাজ্জাক। তবে ক্রেতা সংকটে ভুগলেও ইতোমধ্যে খুলনা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতার এসে রাজার দাম করছেন। মন মতো দাম না হওয়ায় এখনো অপেক্ষায় আছেন।

বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজার খাবার রাজার মতোই দিতে হয়। প্রতিদিনের যা খরচ হয়, তা আমার সাধ্যে কুলাইতেছে না তাই এবার কোরবানিতেই বিক্রি করব। রাজ্জাকের দাবি পর্যন্ত রাজাকে লালনপালন করতে প্রায় ১৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং দিনাজপুর জেলায় তার গরুটিই সবচেয়ে বড়। তার স্বভাব শান্ত প্রকৃতির হলেও মাঝে মাঝে চড়া হয়ে উঠে।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, সন্তানের মতো রাজাকে লালনপালন করেছি। পরিবারের সবাই মিলে যত্ন করে ষাঁড়টি বড় করা হয়েছে। এর চালচলন ও সুঠাম স্বাস্থ্য দেখে ষাঁড়টিকে তারা ‘দিনাজপুরে রাজা’ বলে ডাকেন। 
এদিকে রাজার চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের এআই টেকনিশিয়ান মো. জাকারিয়া হোসেন। তিনি বলেন, এটি পশুসম্পদ অধিদপ্তরের ১৬৮ নং প্রুভেন ব্লু’র সিমেনের হলেষ্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। ষাড়ের মালিক রাজ্জাক আমার বন্ধু মানুষ তার গরু খামারের প্রতি আগ্রহ থাকায় গরুগুলোর জন্য তাকে বিভিন্ন সময় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।

ইএইচ