ঘোড়াঘাটে ফুটবল মাঠ গিলে খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৪, ১২:১৬ পিএম
ঘোড়াঘাটে ফুটবল মাঠ গিলে খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ঐতিহাসিক ফুটবল খেলার মাঠ। দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত সবুজে ঘেঁড়া এই মাঠ। অনেক নামিদামি তারকা খেলোয়াড় জন্ম নিয়েছে এই মাঠে।

তবে সেই খেলার মাঠ গিলে খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দিনদিন খেলার অনুপযোগী হয়ে উঠছে উপজেলার একমাত্র মাঠটি। প্রতিদিন বিকাল হলেই মাঠ ভরে উঠে খেলোয়াড়ের আনাগোনায়। চলে ফুটবল ও ক্রিকেটের অনুশীলন। দিনশেষে বিকাল থেকে রাত অবধি খোলা মাঠে নির্মল হাওয়ার স্বাদ গ্রহণ করতে তরুণ-যুবক থেকে নানা বয়সী মানুষে মুখরিত থাকে খেলার মাঠ।

তবে সেই মাঠ এখন খেলোয়াড়দের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দখল হয়ে গেছে মাঠের দর্শক সারির দুই পাশ। ব্যবসায়ীদের থাবায় মাঠ এখন ব্যবসা কেন্দ্র। মাঠ রক্ষায় ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মাঠকে রক্ষা করতে খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে। তবে তাতেও কোন সুরাহা মেলেনি।

ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পূর্বপাশে মহাসড়কের ধার ঘেঁষে মাঠের জায়গায় গড়ে উঠেছে খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই দোকানগুলো ছিল আরও ১০ থেকে ১৫ ফিট দূরে। ঢাকা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট নামে ওই খাবার হোটেলের কাঠখড়ি রাখা হয়েছে মাঠের ভেতর।

এছাড়াও হোটেলের ময়লা পানি ফেলা হয় মাঠের সীমানায়। এতে নর্দমায় পরিণত হয়েছে মাঠের একপাশ। সম্প্রতি সেখানে আবার গভীর কূপ খনন করেছে হোটেল মালিক। সেই কূপ ঢাকনা ছাড়া খোলা অবস্থাতেই ফেলে রাখা হয়েছে। এতে বিকালে মাঠে খেলা দেখতে আসা শিশু-কিশোর যেকোনো মুহুর্তে সেখানে পড়ে গিয়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে।

একইভাবে পূর্বপাশে অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাধারণের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে মাঠে। এতে ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে মাঠের একপাশ। মাঠের উত্তরপূর্ব কোণে এবং উত্তরপাশে আরেকটি খাবার হোটেলসহ চায়ের দোকান এবং বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। সেসব চায়ের দোকান ও হোটেলের ময়লা পানি ও আবর্জনা ফেলা হয় মাঠের ভেতরে। সেখানেও দীর্ঘদিন আগে একটি ছোট্ট কূপ খনন করা হয়েছিল।

মাঠের উত্তরপাশে দর্শক সারির জায়গা দখল করে নদী থেকে উত্তোলন করা বালুর একাধিক পাহাড় গড়ে তুলেছে বালু ব্যবসায়ী একটি চক্র। মাঠের জায়গা দখল করে জমিয়ে রাখা এসব বালু বিক্রি করা হয় সরাসরি মাঠ থেকেই। হালকা বাতাস উঠলেই এসব বালু উড়ে বেড়াচ্ছে মাঠে। খেলোয়াড়, দর্শক এবং মাঠের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষের শরীরের উপরে এবং চোখে গিয়ে ঢুকছে এসব বালু। এতে ধীরে ধীরে চোখের ক্ষতিতে পড়বে মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করতে আসা খেলোয়াররা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজে মাঠের পূর্বপাশের এসব দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সড়ক প্রশস্তকরণ শেষ হলে ব্যবসায়ী ও দখলদাররা কৌশলে মাঠের দর্শক সারির জায়গা দখল করে আবারো দোকানপাট গড়ে তোলে। আর মাঠে কেসি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে ভাড়া দিয়ে মাঠে বালুর স্তূপ জমিয়ে ব্যবসা করছেন বালু ব্যবসায়ী চক্র। এমনটি দাবি স্থানীয়দের।

ঘোড়াঘাট কিংস ফুটবল অ্যাকাডেমির সভাপতি কাউসার হাবিব বলেন, আমাদের অ্যাকাডেমির খেলোয়াররাসহ অনেকে প্রতিদিন মাঠে অনুশীলন করতে আসে। ব্যবসায়ীদের কারণে মাঠটি দিনদিন খেলার পরিবেশ হারিয়ে ফেলছে। ময়লা আবর্জনার স্তূপ এবং নর্দমায় গিয়ে বল পড়ছে। ব্যবসায়ীদেরকে বাঁধা দিলে তারা উল্টো খেলোয়াড়দেরকে বাজে মন্তব্য করে। আমরা ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সাবেক তারকা ফুটবলার হাফিজার রহমান বলেন, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর মাঠে খেলাধুলা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। ক্রীড়াপ্রেমী ও সম্ভাবনাময় তরুণ-যুবকরা খেলার সুযোগ না পেয়ে মাদকে ঝুঁকবে।

মাঠে অনুশীলন করতে আসা খেলোয়াড় মিম মন্ডল বলেন, মাঠের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি খাল। লিজ দিলে মাছ চাষ করে খাওয়া যাবে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিরলরকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি। খেলাধুলার মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য মাঠের পরিবেশ রক্ষায় আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে বসা হবে।

ইএইচ