কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, খামারিদের ব্যস্ততা যেন ততোই বাড়ছে। পশুকে আকর্ষণীয় করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে যত্নের কোনো ঘাটতি রাখছেন না খামারিরা। নিয়ম করে গরু-মহিষকে কাঁচা সবুজ ঘাস, ভুসি, খৈল, ফিডসহ অন্যান্য খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খামারি ও কাজ করা শ্রমিকরা।
আর মাত্র কয়েকদিন পর কোরবানির পশুর হাটে বেশি দামে পশুকে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে সীমান্ত পথে ভারত থেকে অবৈধপথে ভারতীয় গরু দেশের কোরবানির হাটে আসার শঙ্কায় রয়েছেন উত্তরের সীমান্তবর্তী জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার খামারিরা।
ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা গরুর বিষয়টি ভাবাচ্ছে খামারিদের। ফলে লোকসানের শঙ্কা খামারিদের মনে। প্রতিবেশী দেশ থেকে যাতে গরু আসতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার হাটখোলা, উচনা, কড়িয়া ও নন্দইল সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিজিবির কঠোর নিরাপত্তা উপেক্ষা করে এক শ্রেণির কিছু অসাধু চোরাকারবারিরা প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারত থেকে গরু পাচার করে পাঁচবিবি ও জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে ভারতীয় গরু বিক্রির চেষ্টা করে থাকেন। এজন্য সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবির চোখ ফাঁকি দেওয়াসহ নানা কৌশল অবলম্বনও করে থাকেন চোরাকারবারিরা।
পাঁচবিবি উপজেলার ঘোড়াপা গ্রামের প্রান্তিক খামারি রেজুয়ান হোসেন জানান, আমার মতো অনেক খামারিরা কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর আলাদা যত্ন নিচ্ছেন। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হচ্ছে গরু-মহিষ ও ছাগলের। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে নেওয়া হচ্ছে নিয়মিত খোঁজখবর। ক্ষেতের কাঁচা ঘাস খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে। যদি ভারতীয় গরু বাজারে প্রবেশ করে তবে এই পরিশ্রম খামারিদের বৃথা যাবে। আমরা খামারিরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই খামারিদের রক্ষা করতে অবৈধ গরু প্রবেশ বন্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাছাড়া দেশীয় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় কোরবানির জন্য ৭৫ হাজার ৬৭০টি পশু প্রস্তুত করেছেন ছোট বড় খামারিরা। এর মধ্যে ষাঁড় ৭ হাজার ৫০০, বলদ ৭ হাজার ৫০০, ছাগল ৪০ হাজার, ভেড়া ১০ হাজার এছাড়া অন্যান্য পশু ১০ হাজার ৬৭০।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিয়ায কাযমীর জানান, কোরবানি পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা না করার জন্য আমরা বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। তাছাড়া, ভেটেরিনারি ফার্মেসিতে নিম্নমানের ওষুধ সামগ্রী না রাখার বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। কয়েক দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে খামারিদের।
ভারতীয় গরু প্রবেশের বিষয়ে তিনি জানান, আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি। ভারতীয় গরু প্রবেশ ঠেকাতে না পারলে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অবৈধ পথে ভারত থেকে চোরাকারবারিরা যেন গরু দেশে আনতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন বিজিবি সদস্যরা।
ইএইচ