নাটোরের আড়তে বেড়েছে চামড়ার আমদানি

নাটোর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম
নাটোরের আড়তে বেড়েছে চামড়ার আমদানি

দেশের মধ্যে নাটোরের চামড়ার আড়ত ২য় বৃহত্তম ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রধান বাজার। এখানে ছোট বড় প্রায় দুই শতাধিক চামড়ার আড়ত রয়েছে। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১২’শ ছোট বড় চামড়া ব্যবসায়ীর রুজি রোজগার।

বিগত পাঁচ বছরে চামড়া ব্যবসায়ে মন্দা যাওয়ার পর এবার নাটোরের আড়তগুলোতে চামড়ার আমদানি বেড়েছে। তাই এই মৌসুমে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে সাথে লাভের দেখা পেয়েছে আড়তদারেরাও। কিন্তু তারপরও পূর্বের বকেয়া এখনও না পাওয়ায় লোকসানেই রয়েছেন তারা।

তবে সরকার ঘোষিত দামে চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করে লাভ পেয়েছেন। নাটোরের এই বৃহত্তম চামড়ার আড়তে এবার ১৬ লাখ পিসের বেশি চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চামড়া ব্যবসায়ীরা। দেশের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চল মিলিয়ে ৩৫টি জেলার চামড়া আসে এখানে। শুধুমাত্র ঈদের দিন এবং তার পরের দিন লক্ষাধিক চামড়া সংগ্রহ করেছে এখানকার আড়ত মালিকরা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ নিয়ে।

পিন্টু, রিংকু, মামুনসহ অন্যান্য মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, লাখ টাকার কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি পিস গড়ে ৭’শ টাকা দরে কিনেছেন। সেই চামড়া নাটোরের আড়তে নিয়ে এসে এবার ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ৫ বছর পর এবার লাভের মুখ দেখলাম।

চামড়া ব্যবসায়ী আনসার আলী বলেন, এবার চামড়ার বাজার ভালো। ছোট বড় মিলিয়ে প্রতি পিস ষাঁড়ের চামড়া আমরা ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। আর বকরির চামড়া ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে মানহীন চামড়া আমরা কিনি না।

মাহবুব, রুবেলসহ আরও চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, নাটোরসহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদরাসাগুলো নাটোরের আড়তে চামড়া বিক্রি করে। এবার নাটোরের আড়তগুলোতে গরুর চামড়া অন্তত ৫০ হাজার পিস এবং ছাগলের চামড়া অন্তত ২০ হাজার পিস বিক্রি হয়েছে। তবে লবণযুক্ত চামড়া আসতে সময় লাগবে আরও দিন চার-পাঁচেক।

তবে তারা বলেন, আগামী সপ্তাহে দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২৫ থেকে ৩০ জেলার লবণযুক্ত চামড়া আসবে নাটোরের চক বৈদ্যনাথের আড়তে। এরপর ট্যানারি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা চামড়া ক্রয় করা শুরু করবেন।

নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ী মো. আজম বলেন, এই মৌসুমে একটি গরুর চামড়ায় সর্বোচ্চ ১২’শ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। তাতে করে এবার ব্যবসায়ীরা চামড়ার ভালো দাম পেয়েছেন। বিগত ৫ বছরে চামড়ার মন্দা বাজার চলছিল। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গরুর চামড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার কারণে চামড়ার দামও বেড়েছে।  তবে কিছু মৌসুমি কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ দিতে দেরি করে ফেলেন। ফলে চামড়ার গুণগত মান কমে যায়। দামও কমে যায়।

তিনি বলেন যারা কাঁচা চামড়া কিনেন তারা ৫ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে রাখলে চামড়ার গুণগত মান ভালো থাকে। আর কাঁচা চামড়া লবণ দেয়ার পূর্বে ঠান্ডা জায়গায় রাখলে গুণগতমান ভালো থাকে।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন বিকপল থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৭০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার চামড়ার দামও বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তারা।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, প্রতিবছর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে চামড়া কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তারা চামড়া পেলেই কিনে নেন। কিন্তু সে চামড়ার মান, আকার ও লবণ দ্বারা সংরক্ষণের মাত্রা অনুযায়ী আমরা চামড়া কিনে থাকি। কাঁচা চামড়া লবণ দ্বারা আরও ২/৩ দিন আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা ন্যায্য দামেই চামড়া ক্রয় করছি।

চামড়ার বাজার পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাছুদুর রহমান জানান, আমরা সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করছি। গতবারের চেয়ে এবার চামড়ার দামও বেশি। ছোট ছোট কিছু অভিযোগ শুনেছি এবং তাৎক্ষণিক সেগুলো সমাধান করেছি। চামড়ার আড়তদাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন কোনো ব্যবসায়ী বিক্রেতাদের হেয় করার চেষ্টা করলে তারাই সেগুলোকে নিভৃত করবেন।

ইএইচ