জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ত্রাণের জন্য হাহাকার

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৪, ০৮:২৯ পিএম
জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ত্রাণের জন্য হাহাকার

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন পুরো উপজেলার নিচু এলাকার লোকজন। পৌরশহরের লোকজনও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত দুদিনে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ সড়কের পর জগন্নাথপুর পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের আংশিক অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌরশহরের হবিবনগর এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে বন্যার্ত লোকজনের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। তারা খুব কঠিন সময় পাড় করছেন।

জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পুরো উপজেলায় ১৪৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। জরুরি ভিত্তিতে জগন্নাথপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। কিন্তু বন্যার্ত এলাকা আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারিভাবে সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ফেয়ারফেইস জগন্নাথপুর নামের একটি সামাজিক সংগঠন কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করে ও একজন হোটেল ব্যবসায়ী আখনি পরিবেশন করেন। এদিকে, বন্যার্তদের মাঝে মেডিকেল টিম শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ঔষধ সরবরাহ করে। এগুলোর বাইরে তারা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাই জগন্নাথপুর পৌরসভা সহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। বিশেষ করে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন, হলদিপুর- চিলাউড়া ইউনিয়ন ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের জনসাধারণ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও জগন্নাথপুর পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের হবিবনগর নামক স্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এই সড়কের অংশ শিবগঞ্জ-বেগমপুরে যাওয়ার যোগাযোগ মাধ্যম আর এইচ ডি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে ঘোষগাঁও সড়ক পানির নীচে। তলিয়ে যাওয়া এই সড়কে একটি বিশাল গাছ পড়ে আরো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া জগন্নাথপুর পৌরশহরের ৫ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ স্থান পালিতে তলিয়ে গেছে। ৬ নং ওয়ার্ডের একটি অংশ পানিতে নিমজ্জিত। এছাড়া, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সরকারি দপ্তর, জগন্নাথপুর-সিলেট বাসস্ট্যান্ড, জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা, জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, জগন্নাথপুর মৎস্য আড়ত ও মাছের বাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

বন্যার্তরা জানান, পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকের উপার্জন বন্ধ। এমতাবস্থায় তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তারা জানান, বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি-বেসরকারিভাবে তেমন কোনো ত্রাণ পাননি। ত্রাণ ও আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমরা উপকৃত হতাম।

হবিব নগরস্থ ওয়ারিশ আলীর কলনীর বাসিন্দা আলমগীর মিয়া বলেন, গত ৪ দিন ঘরে পানি উঠে। ঠিকঠাক মতো কাজে যেতে পারছি না। তাই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কঠিন সময় পার করছি। সরকার ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে উপকৃত হতাম।

এই কলোনির বাসিন্দা হামিদা বেগম জানান, বন্যার কারণে আমি খুব কষ্টে তিন সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করছি। কিন্তু সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কিচ্ছু পাইনি।

ব্যাটারিচালিত অটোচালক শাহীন মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম জানান, ঘরে পানি থাকার কারণে হাঁড়ি-পাতিল খালি। তাই বাজার থেকে কিনে এনে চিড়া খাচ্ছি। কেউ কিছু দেয়নি।

জগন্নাথপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের রহমান মিয়ার ঘরে পানি থাকার কারণে ২ দিন আগে পরিবার নিয়ে আব্দুস সামাদ আজাদ অডিটোরিয়ামে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানে তারা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাননি।

জুয়েল মিয়া জগন্নাথপুর পৌরভবনের পেছনের কলোনি থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। তিনি জানান, গত বুধবার ডাক্তার প্যারাসিটামল দিয়ে যায়। একটি সামাজিক সংগঠন ও রেস্টুরেন্টের মালিক আমাদের জন্য আখনি পাঠায়। এর বাইরে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কারো সহযোগিতা নেই।

ঘোষগাঁও গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মালিকের ঘর পানিতে তলিয়ে যায়। এবারের অকাল বন্যায় তার ঘরের সব ধান নষ্ট হয়ে যায়, হাঁসমুরগি পানির স্রোতে ভেসে যায়। তিনি জানান,পরিবার নিয়ে পরিবার ও গরু-বাছুর নিয়ে ঘোষগাঁও ব্রিজে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু সাংবাদিক ছাড়া কেউ আমাদের খবর নিতে আসেনা। শুধু তারা নন, বন্যা কবলিত আরো অনেকের আর্তি শোনা যায়।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খানম সাথী বলেন, বন্যা কবলিত লোকজনকে সহযোগিতা করতে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুরের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে তিনি আহ্বান জানান

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল- বশিরুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলার বন্যার্তদের জন্য বৃহস্পতিবার ২৭ টন ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগে আমরা আরো সাড়ে ৯ টন ত্রাণ বিতরণ করি। তিনি জানান, বন্যার্তদের জন্য আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরএস