- দশ মেডিক্যাল টিম নিয়ে মাঠে আছেন টিএইচও
- পানি কমলে রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা: ইউএনও
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ঈদুল আজহার দিন থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বাড়তে শুরু করেছিলো বন্যার পানি। চারদিন পর বৃষ্টিপাত থামলে কমতে শুরু করেছে পানি। এতে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িতে কাদা, আবর্জনা থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো দুর্ভোগ মাথায় নিয়েও নিজের বসতঘরে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন।
তাদের কেউ কেউ নৌকায় করে কিংবা পানিতে ভিজে নিজের ভিটায় গিয়ে দেখে আসছেন পানিতে ফেলে আসা বসতঘর। যেভাবে রোদের দেখা মিলেছে এরকম আরও দু’তিনদিন থাকলে সোমবার নাগাদ নিজেদের বসত ঘরে ফিরে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন বানভাসি আশ্রিতরা।
জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১শ’ ৫৫টি গ্রামের অধিকাংশই তলিয়েছে বন্যার পানিতে। প্লাবিত হওয়া অনেক গ্রামের শত শত পরিবারের লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। কেউ কেউ উঠেছেন নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের উঁচু ভিটায়।
উপজেলার ৪২টি আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিত বানভাসিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৩ মেট্রিক টন চাল। বিতরণ করা হয়েছে শুকনো খাবারও। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার কারণে গত দুই দিনে অন্তত এক থেকে দেড় ফুট পানি কমেছে প্লাবিত এলাকাগুলোর। এতে স্বস্তি ফিরেছে বন্যার্ত মানুষের মনে। মুখে ফুটেছে হাসি। তবে সৃষ্টি হয়েছে নতুন দুর্ভোগ। রাস্তাঘাটে কাদা, জোঁক, সাপসহ নানান পোকামাকড়ের ভয় থাকবে চলাচলে।
এছাড়াও ডুবে যাওয়া ঘর ও তার আঙিনায় ময়লা আবর্জনার কারণে সৃষ্টি হবে নানান সমস্যার। বিশেষ করে মানুষের টয়লেট সমস্যা চরম আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. ইকবাল হাসান বলেন, এই মুহূর্তে আমি একটি মোবাইল টিম নিয়ে পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছি। বন্যার্ত মানুষের সেবায় আমার সর্বদা তৎপর। সমস্ত উপজেলায় আমাদের ৮টি স্বাস্থ্য সেবাদানকারী টিম, একটি কন্ট্রোল রুম ও আমার একটি ভ্রাম্যমাণ টিমসহ মোট ১০টি টিম নিয়ে কাজ করছি। ইউনিয়নে ইউনিয়নে আমাদের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঘুরে ঘুরে পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন বিতরণ করছেন। বন্যা পরিস্থিতিতে অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের জন্য আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সব সময় খোলা। আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের সেবা দান করবো। সবচেয়ে বড় কথা সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। গভীর নলকূপের পানি পান করতে হবে।
শুক্রবার বিকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আক্তাপাড়া, জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা, আসামপুর, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের খালপাড় ও পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের নিদনপুর, হোসেনপুর, নবীনগর, রসুলপুর, কাদিপুর ও ইসলামপুর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঝলমলে রোদে চিকচিক করছে এসব এলাকার পথঘাট। যেসব রাস্তাঘাট মঙ্গলবার ও বুধবার পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে ছিল সেসব রাস্তাঘাট ভাসতে শুরু করেছে। তবে সেসব রাস্তাঘাটে কাদা, ময়লা মিশ্রিত হয়ে আছে। রাস্তার মধ্যে বিভিন্ন প্রাণি মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়। রাস্তায় শামুক ভেঙে পড়ে আছে। যা পা কেটে যাওয়ার কারণ হতে পারে। অনেকের ঘরে কাদামাটি থাকার কারণে হাঁটাচলা করতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কেউ কেউ বাড়িতে গিয়ে নিজের ঘরদোর দেখে আসছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, যদি দিনের এমন অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী সোমবার নাগাদ নিজের ডুবে যাওয়া বাড়িঘরে ফিরতে পারবেন তারা।
ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ফরিদা বেগম, চন্দপুর কোনারবাড়ি গ্রামের সিরাজ মিয়া, নবীনগরের ইসকন্দর আলী ও নিদনপুর গ্রামের লিটন মিয়া বলেন, দু’দিন ধরে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ভাসলে ময়লা আবর্জনা থাকবে। রাস্তার অনেক ক্ষতি হবে। ঘরবাড়িরও ক্ষতি হয়েছে। এগুলো পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে৷ সব পানি নেমে গেলে রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তারপর করণীয় ঠিক করবো। আমরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করছি৷ শুরু থেকে বন্যার্ত মানুষের সেবায় বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছি।
ইএইচ