নান্দাইলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
নান্দাইলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-যাপন।

স্বল্প আয়ের বাজার খরচে জীবন-যাপন পরিচালনা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। নিম্ন ও মধ্যবিত্তেরা এখন জমি বন্ধক ও ঋণ করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে জীবনধারণ করছেন। দেশের মানুষ মাছে-ভাতে বাঙালি হলেও এখন দু-মুঠো ভাত জোগাড় করতে পারলেও মাছ পাওয়া যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।

মাছ ও মাংস সপ্তাহে একদিনেও অনেকের খাবার টেবিলে জুটে না। ডালও ১৪০ টাকা কেজির উপরে। বাড়িতে স্বজনদের আদর-আপ্যায়নে এখন ডিমই একমাত্র ভরসা। ঘোড়ার দৌড়ের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে দিন দিন বেড়েই চলছে। দ্রব্যমূল্য হ্রাসের কোন সম্ভবনা নাই।

ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম হ্রাসের পরিবর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র লবণ ও বিভিন্ন শাক ব্যতীত চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস, তরি-তারকারি ও ডিম সবকিছুই নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের যেন নাগালের বাইরে। তবে চালের বাজারে স্বস্তি থাকলেও মশলা ও ফলমূলের বাজারে আগুন (কড়া দাম)।

এ দিকে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাঝেমধ্যে বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং করা হলেও বাস্তবে বাজারে এর কোন প্রভাব পড়ছে না। সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা কাউকে কিছু বলতে না পেরে মুখ বুঝে সহ্য করে অসহায়ের মতো জীবন-যাপন করছে।

বাড়িতে মেহমান আত্মীয় স্বজন আসলে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এছাড়া রাস্তায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ঈদের এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ/চারগুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে, ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারমূল্য ও যানবাহনের উর্ধ্বগতি ভাড়া প্রদানে সাধারণ মানুষের যেন নাভিশ্বাস।

সরেজমিনে উপজেলার বেশ কয়েকটি বাজার পরির্দশন করে জানা গেছে, বাজারে কাঁচা মরিচ ও আদার ঝাঁজ বেশি। কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি খুচরা মূল্য ২৪০ টাকা ও আদা ৩০০ টাকা কেজি। যদিও পাইকারি বাজারে কাঁচার মরিচ প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।

এদিকে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা কেজি, মাছে কমন আইটেম পাঙাস মাছ ১৬০ থেকে ১৮০টাকা পর্যন্ত, সাদা ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজি, কক মুরগি ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। এ

ছাড়া দেশী মশুরের ডাল ১৪০ টাকা, বিদেশি ১১০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, ডিম ৫৫ টাকা হালি, সয়াবিন তৈল প্যাকেটজাত প্রতি কেজি ১৬৫ টাকা ও খোলা তৈল ১৫০ টাকা কেজি, মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ও চিকন চাল ৫০ টাকা কেজি।

কাঁচাবাজারে পেয়াঁজ খুচরা ৯০ টাকা কেজি, অথচ পাইকারি বাজারে ৫০ টাকা কেজি, কচুর লতি খুচরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পাইকারি ২৫ টাকা কেজি।

রসুন ২২০টাকা, টমেটো ও কচুর মুখি ৮০ টাকা, গোল আলু ৬০ টাকা, জাম আলু ৭০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা। কাঁচাবাজারে স্বস্তি মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি ও বিভিন্ন শাকের আটির দাম ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা। লবণের প্যাকেটজাত প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও খোলা লবণ ২০ টাকা কেজি রয়েছে।

একদিনের শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে খাবারের কমন আইটেমগুলো কিনতে গিয়েই টাকা শেষ হয়ে যায়। বাড়িতে থাকা শিশু-কিশোর বা গর্ভবতী মা ও অসুস্থ বাবা-মায়ের ওষুধ বা পছন্দের বাড়তি খাবার কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলার মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি বাজার মনিটরিং করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, বাজার মনিটরিং করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ইএইচ