রোগীর ওজন ৫০ কেজি। অথচ তার পেটে ১২ কেজি ওজনের বিরল টিউমার। রোববার প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রেট্রো পেরিটোনিয়াল নামের টিউমারটি অপসারণ করলো বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।
বর্তমানে রোগী কামাল হোসেন সুস্থ আছেন। সফল এই অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জি. এম. নাজিমুল হক।
অস্ত্রোপচারের টিমে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার, সহকারী অধ্যাপক ডা. গ্রিন চন্দ্র বিশ্বাস, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. অনুপ কুমার সরকার ও ডা. মো. হোসাইন শাওন, মেডিকেল অফিসার ডা. মো. বায়েজীদ হোসেনসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
রোগীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী মৌরিন বেগম জানান, গত দুই বছর পূর্বে পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠী উপজেলার সোহাগদল গ্রামের রেডিও মেকার হিসেবে পরিচিত মো. কামাল হোসেন পেটে ব্যথা শুরু হয়। তখন অর্থের অভাবে গ্রামের হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। পরবর্তীতে হোমিও চিকিৎসক তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। গত ২২ জুন তিনি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ১ নং ইউনিটে অধ্যাপক ডা. জি. এম. নাজিমুল হকের তত্ত্বাবধায়নে ভর্তি হন।
রোগীর খালাতো ভাই মো. জাহিদ হোসেন জানান, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে দুই সন্তানের জনক মো. কামাল হোসেনকে ভর্তির পর এখানকার চিকিৎসকরা যত্ন সহকারে তার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। অতঃপর প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়া তেমন কোন খরচ ছাড়াই সফল অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। রোগী বর্তমানে অন্য অপারেটিভে আছেন।
সার্জারি বিভাগের ১নং ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. অনুপ কুমার সরকার বলেন, রোগী কামাল হোসেন পেট ফুলা, পেটে ব্যথা, খাবারে অনীহা ও দিনে দিনে ওজন কমে যাওয়া সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। তখন তার পেটে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তার পেটে বড় সাইজের রেট্রো পেরিটোনিয়াল নামের টিউমার রয়েছে। তখন ৪৫ বছর বয়সী এই রোগীর ওজন ছিল মাত্র ৫০ কেজি। রোগীর কাছে অপারেশনটি ছিল খুবই জটিল। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে এই অপারেশনে।
সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, রোববার সকালেই রোগী কামাল হোসেনের অস্ত্রোপচার শুরু হয়। তার পেট কেটে দেখা যায় একটি বড় আকারে টিউমার পেটের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। দীর্ঘক্ষণ অপারেশনের পর প্রায় ১২ ওজনের রেট্রো পেরিটোনিয়াল টিউমারটি অপসারণ করা হয়।
সফল এই অপারেশনের নেতৃত্ব দেয়া শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জি. এম. নাজিমুল হক বলেন, রোগীর পেটের চারপাশে টিউমারটি ছড়িয়ে ছিল। বিশেষ করে তার পেটের ওপরের অংশ থেকে শুরু করে নীচ পর্যন্ত টিউমার বিস্তৃত ছিল। আমরা রোগীর খাদ্যনালি সেইফ করে ১২ কেজি ওজনের বড় আকারের টিউমারটি অপসারণ করেছি এবং টিউমারটি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বায়োপসি টেস্ট করতে পাঠানো হয়েছে। রোগী বর্তমানে সুস্থ আছেন। বায়োপসি রিপোর্ট আসা পর্যন্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকবেন।
তিনি বলেন, এই ধরনের টিউমার রোগী বেশিদিন বহন করলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা এই রোগের করানো হলে রোগীর ঝুঁকির আশঙ্কা কমে যায়। তাই শরীরের কোথাও কোনো চাকা হলে বা পেট ভারী হওয়ার মতো সমস্যা দেখা গেলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ইএইচ