ফেনীতে গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও এনজিও কর্মকর্তারা

ফেনী প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম
ফেনীতে গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও এনজিও কর্মকর্তারা

ফেনীর সোনাগাজীতে ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম নামে নিবন্ধনহীন একটি এনজিওর কর্মকর্তারা রাতের আধারে অফিসে তালা লাগিয়ে ৫ শতাধিক গ্রাহকের সঞ্চয়ের প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েক মাস আগে জেলার সোনাগাজী পৌরসভার চর গনেশ এলাকার সাত নাম্বার ওয়ার্ডের হাওয়াই রোডের মো. এয়াছিনের বাড়ির নীচ তলায় দুটি রুম ভাড়া নিয়ে ঢাকার নিবন্ধনকৃত বলে আটজন প্রতারক ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম নামে একটি এনজিও অফিস খুলে বসেন।

গত ১ জুলাই থেকে গ্রাহকদেরকে ঋণ দেয়ার কথা ছিল। অথচ পাঁচশতাধিক গ্রাহক থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে প্রতারকরা। ২৯ জুন রাতে অফিসে তালা ঝুলিয়ে ব্যবহৃত মুঠোফোনগুলো বন্ধ করে উধাও হয়ে যায় তারা। ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা উপায় না দেখে অফিসের দরজায় আরও একটি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও এলাকাবাসী জানায়, ঢাকার কাকলী বনানীর মিলি সুপার মার্কেটের বিপরীতে দশ নাম্বার রোডের ৫৬০ নাম্বার বাড়ির এনএস ভবনের দ্বিতীয় তলা প্রধান কার্যালয় ঠিকানা ব্যবহার করে সোনাগাজীতে অফিস খুলে বসেন।

ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন জসিম উদ্দিন নামে এক লোক। জাঁকজমকপূর্ণ অফিস সাজিয়ে ঋণ দেয়ার নামে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সহজ সরল মানুষদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকদের প্রলোভন দিয়ে পাঁচশতাধিক গ্রাহক থেকে প্রায় তিন কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেন।

গত ২ থেকে ৩ মাস যাবৎ সহজ কিস্তিতে ঋণ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের দায়িত্ব, মৃত্যুর পর ঋণ মওকুফ, সঞ্চয়ের ওপর দ্বিগুণ লাভ ও ঘর নির্মাণ করে দেওয়াসহ লোভনীয় অফার দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গ্রাহকদের থেকে আমানত ও সঞ্চয় সংগ্রহ করেন চক্রটি। রিকশাচালক, দিনমজুর, প্রবাসী ও ব্যবসায়ীসহ প্রায় পাঁচশতাধিক গ্রাহক তৈরি করে।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, এনজিওটিতে তাদের সদস্য বানিয়ে চর চান্দিয়া গ্রামের আয়েশা আক্তারের কাছ থেকে ২৪ হাজার ৫৫০, আসমা আক্তারের ৩৯ হাজার ৫০০, সুমি আক্তারের ৩৯ হাজার ৫০০, মো. শাকিলের ৪৫ হাজার ৫৫০, নুর আলমের ১৬ হাজার, বেলায়েত হোসেনের ১৬ হাজার ৫৫০, আকলিমা আক্তারের ১৫ হাজার, টিপু সুলতানের ১৯ হাজার ৫৫০, নুর আলমের ১৬ হাজার ৫৫০, মো. ইসমাঈলের ১৬ হাজার ৫৫০, তামান্না আক্তারের ২৭ হাজার টাকা ও মো. সুজনের ৫৬ হাজার টাকাসহ অসংখ্য ৫শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারক কর্মকর্তারা।

এদিকে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় অনেক নারী লাভের আশায় স্বামীর অজান্তে টাকা রাখায় বেশ কয়েকজন গৃহবধূর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিচার পেতে থানায় গিয়ে ঘুরছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা।

দফায় দফায় বন্ধ অফিসটির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করছেন। প্রতারকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

এ ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সুদ্বীপ রায় বলেন, তিনি বিষয়টি শুনার পর সরেজমিনে গিয়েও সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জসিম উদ্দিন ও তার সহকর্মীদেরকে পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনগুলো বন্ধ রয়েছে।এরপরও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, মানুষ কেন লোভে পড়ে অনিবন্ধিত এনজিওতে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়, সেটা বুঝতে পারছি না। তিনি সবাইকে অর্থ ও সম্পদ লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

ইএইচ