‘তোমার সঙ্গে আমি আর নাই’ বলে খোলা আকাশের নিচে মাকে ফেলে গেলেন ছেলে

কটিয়াদি (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৪, ০৭:০২ পিএম
‘তোমার সঙ্গে আমি আর নাই’ বলে খোলা আকাশের নিচে মাকে ফেলে গেলেন ছেলে

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ৫ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা গুলেছা বানু৷ খাদ্য-বাসস্থান ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে অসহায় অবস্থায় সময় কাটছে তার৷

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কটিয়াদি উপজেলার বেতাল বাজার সংলগ্ন মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দোকানের বারান্দায় শুয়ে আছেন বৃদ্ধা গুলেছা বানু। পাশেই রাখা মুড়ির পোটলা ও পানি। গতরাতে বৃষ্টি হওয়ার পর বাজারের পাহারাদার দোকানের বারান্দায় রেখে যায়৷ স্বাভাবিক কথা বলতে পারলেও বয়সের ভাড়ে চলাফেরা করতে পারেন না। মাঝে মধ্যে মানুষের দেওয়া কিছু খাবার খাচ্ছেন। অধিকাংশ সময় ক্ষুধা নিয়েই পার করতে হচ্ছে তার দিনরাত৷ দেখভাল করার মত তার কেউ নেই।

একই ইউনিয়নের বৈরাগিচর গ্রামে তার বাড়ি৷ বৃদ্ধা গুলেছা বানুর বড় ভাই মৃত ফালু ফকির ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ স্বামী বাতেন ফকির ৫ বছর আগে মারা যায়৷ তিনি ছিলেন ইউনিয়ন শ্রমীকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক৷ এরপর থেকে একমাত্র ছেলে হোসেন তার দেখাশোনা করতেন।

স্বামীর সঙ্গে ভূমিহীন এই দম্পতি ৩০ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কৃষি উপ-সহকরী কর্মকর্তার পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করতেন৷ স্বামীর মৃত্যুর পরও এখানেই ছিলেন। ছেলে ভবঘুরে হওয়ায় মাকে সহ্য করতে পারে না৷ প্রায় সময় অত্যাচার করতো৷

গত বৃহস্পতিবার ছেলে মাকে বলে তোমার সঙ্গে আর আমি নাই। এই বলে সে উধাও হয়ে যায়৷ এতেই বিপাকে পড়েন এই বৃদ্ধা৷ পরিত্যক্ত ভবনে বৃষ্টির পানি জমায় সেখানেও থাকতে পারছেন না৷ ফলে বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে তার৷

বৃদ্ধা গুলেছা বানু বলেন, বাবাগো আমারে বাঁচাও৷ আমার ছেলেটাও আমারে রেখে চলে গেলোগা। ৫ দিন ধইরা খাইয়া না খাইয়া খোলা আকাশের নিচে পইরা রইছি৷ আমারে তোমরা বাঁচাও৷ আমার ভাই দেশের জন্য যুদ্ধ করছে। এভাবেই কথাগুলো বলে কেঁদে কেঁদে বিলাপ করছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা গুলেছা বানু।

তিনি আরও বলেন, আমার একমাত্র ছেলে হোসেন প্রায় সময় আমাকে অত্যাচার করতো৷ আমি কেন মরি না তাই বলতো৷ ঈদেও একটু ভালো খাবার দেয়নি৷ আমার সঙ্গে আর নেই বলে ৫ দিন আগে ফেলে চলে গেলো৷ এখন আমি কোথায় থাকবো, কি খাবো জানি না৷ আমি মরলে লাশ যেনো এই ছেলে না ধরে৷

মাসূয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বাক্কার বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ। খোঁজ নিতে পারিনি৷ কি করা যায় ভাববো। ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাবো বিষয়টি৷

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমি নিজে গিয়ে দেখে বৃদ্ধার জন্য প্রয়োজনীয় যা করা যায় তাই করবো৷

ইএইচ