চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক দুটি আদালতে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা মামলায় তিনজনকে এই দণ্ড দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিজারক মোহা. আদীব আলীর আদালতে অস্ত্র মামলায় একজনকে এই দণ্ড প্রদান করা হয়।
সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ও নারী এবং শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেলার ভোলাহাট উপজেলার বালুটুংগী গ্রামের মৃত গামজাদের ছেলে জাক্কার, একই গ্রামের মৃত- মিয়ারুদ্দিনের ছেলে মুনসুর আলী ও মুশরীভূজা গ্রামের আ. করিমের ছেলে মো. মফিদুল ইসলাম ওরফে সহিরুল।
অপর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিরাহিমপুর গ্রামের জবদুল মণ্ডলের ছেলে আবজাল হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক দুটি মামলার বরাত দিয়ে জানান, ভোলাহাট উপজেলার ঘাইবাড়ি গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর মেয়ে সেমালী খাতুন ওরফে কান্দুনী (৪৫) প্রতিদিনের ন্যায় ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে বাড়ি হতে রাঙ্গামাইট্যা বিলে গরু ও ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরের দিন রাঙ্গামাইট্যা বিলে ধান ক্ষেত থেকে মাথাবিহীন রক্তমাখা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট নিহতের কন্যা শারাবনী বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ভোলাহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোলাহাট থানার পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জাক্কার, মফিদুল ও মুনসুরকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার জাক্কার ও মো. মফিদুল ইসলাম ওরফে সহিরুলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(৩) ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
একই সঙ্গে আসামি মুনসুর আলীকে ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এই তিনকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২০১ ধারায় ৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। রায়ে সকল সাজা এক সঙ্গে চলবে উল্লেখ করা হয়। আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নাজমুল আজম জানান, ২০২০ সালের ১৫ জুলাই এজাহার নামীয় আসামি আফজাল আত্মগোপনের জন্য গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে শিবগঞ্জের মর্দনা ব্রিজের ওপর অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে পালানোর সময় একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও দুই রাউন্ড গুলিসহ আবজালকে আটক করা হয়। ওই দিনই পুলিশের এসআই আতাউর হোসেন বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানার মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল বারিক তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই আবজালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ১৯(এ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৯ (এফ) ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
ইএইচ