পদ্মার ভাঙনে কেড়ে নিচ্ছে রাতের ঘুম!

গোয়ালন্দ ( রাজবাড়ি) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
পদ্মার ভাঙনে কেড়ে নিচ্ছে রাতের ঘুম!

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পদ্মা নদীতে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। অতি বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসায় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার উপর পদ্মা পাড়ের মানুষের গলার কাঁটা হিসেবে রয়েছে মহাপ্রকল্প।

সরকার মহাপ্রকল্প গ্রহণ করলে তিন ধাপে ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও কাজ শুরু হয়নি এখনো। জানা যায়, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাটকে নদী রক্ষা বাধসহ আধুনিক নৌ-বন্দরের আওতায় আনতে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে আড়াই বছর আগে।

অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি নৌ-বন্দরের জন্য প্রায় ত্রিশ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এবং জমির মালিকদের কোনো নতুন ভবন করতে নিষেধ করা হয়। আড়াই বছর পার হলেও জমি অধিগ্রহণের টাকা দেওয়া হয়নি স্থানীয়দের পাশাপাশি নদী রক্ষা বাধ নির্মিত হয়নি এখনও। গত একদশকে এক চতুর্থাংশে ঘাট পদ্মার পেটে গেলেও আশ্বাস ছাড়া কোন কাজ হয়নি দৌলতদিয়া ঘাটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১ নং ফেরিঘাটে ও  লঞ্চ ঘাটের পাশেই নতুন পাড়া, দৌলতদিয়া ৪ নং ৬ নং ও ৭নং  ফেরিঘাটের মাঝে ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে।

ঝুঁকিতে রয়েছে ৪ নং ফেরিঘাটের মসজিদ,  ইতিমধ্যে কিছু ঘর বাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ জিওব্যাগ ফেললেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া জিওব্যাগ ফেলানো নিয়ে রয়েছে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ।

ভুক্তভোগী ছলিম সাধু বলেন, বিআইডব্লিউটিএ অ্যাকওয়ার নিয়ে আমাদের প্রায় তিন বছর আগে একটি নোটিশ দেয়। আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দেবে, গাছপালাসহ শুধু লিখে নিয়ে যায়; কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। কর্তৃপক্ষ প্রতিবার বলে ঈদের পরে করব, ঈদের পরে করব। কিন্তু সরকার এ বিষয়টি নিয়ে কোনো মাথা ঘামাচ্ছে না। নদী ভেঙে আসছে, আমরা বাড়ি ঘর ভেঙে সরাতে পারছি না, গাছপালা কাটতে পারছি না, নতুন করে গাছপালা লাগানো এবং ঘর বাড়ি মেরামত করতেও পারছি না। এর মধ্যে কেউ ঘরবাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসাও করতে পারছেন না। অ্যাকওয়ারের মধ্যে আমার একটি বাড়ি আছে। বালুর ব্যবসা ছিল। বালুর ব্যবসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বাড়ি ঘরে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে অথচ মেরামতও করতে পারছি না।

মো. উজ্জ্বল মন্ডল নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, দীর্ঘ কয় এক  বছর ধরে আমরা কঠিন সমস্যার মধ্যে আছি। বন্দর করার জন্য আমাদের জমি অধিগ্রহণ করছে বিআইডব্লিউটিএ। আমাদের বাড়ি ঘর অবকাঠামো যা কিছু ছিল, তারা সিজার লিস্ট করছে। পর্যায়ক্রমে একাধিক নোটিশ দিছে আমাদের এবং রাজবাড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল আমরা সেখানে গিয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে, আপনাদের ঘর দরজা জমিসহ সবকিছু দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পটির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়। এখানে আপনারা নতুন কিছু করতে পারবেন না। আপনাদের যা কিছু আছে, সেগুলোও নিতে পারবেন না। এখন আমাদের ঘর-দরজাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আমরা মেরামত করতে পারছি না। এক কথায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. রহমান মন্ডল জানান, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বাসী চায় নদী শাসন। যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করতে পারে ।

ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়াধীন বলে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, এখানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এটা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে গিয়েছে। পাস হলে ভুক্তভোগীদের টাকা পরিশোধ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, আমাদের ইনিশিয়ালি এটা প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট ছিল। কিন্তু এখন নতুন করে আবার সমীক্ষার প্রয়োজন। জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। জমি নেওয়ার আগে অবশ্যই ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

বিআরইউ