হবিগঞ্জে পানিতে ডুবে মৃত্যু

২ শিশুর লাশ বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেওয়ায় মানববন্ধন

মীর মো. আব্দুল কাদির, হবিগঞ্জ প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৪, ০৯:১৪ পিএম
২ শিশুর লাশ বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেওয়ায় মানববন্ধন

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ শেষকৃত্যের জন্য একটু মাটি জুটলো না পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর জন্য।

গ্রাম্য মাতব্বরদের বাঁধায় শ্মশানে সমাধি দিতে না পেরে বস্তায় ভরে কালনী নদীতে ফেলে দিতে হলো শিশু দুটির লাশ। এর প্রতিবাদে হবিগঞ্জ সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ জেলা জজের কার্যালয়ের সামনে চৌধুরী মিছবাহুল বারী লিটনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে বক্তব্য দেন, অ্যাডভোকেট ফয়সাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট রুহুল হাসান শরীফ, অ্যাডভোকেট মিঠু চন্দ্র গোপ, তোফায়েল সোহেল, শরীফ চৌধুরী, শাহ জালাল উদ্দীন জুয়েল।

তাদের দাবি গ্রাম্য মাতব্বরদের এমন কার্যকলাপে নিরীহ পরিবারগুলো জিম্মি হয়ে পরে। এদের অন্যায় কর্মকাণ্ডের আদেশ-নির্দেশই এলাকার আইন। বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠেছে।

গত শনিবার (১ জুন) হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরে ফুটবল খেলা শেষে পুকুরে গোসল করতে নেমে মারা যায় ওই গ্রামের দুই শিশু প্রলয় দাস (৭) ও সুর্য দাস (৬)।

সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী মরদেহ দাহ করা হয়। তবে শয় তা দাহ না করে সমাধি দেওয়ার রীতি রয়েছে। শু প্রলয় দাসের মরদেহ শ্মশানে সমাধি দেয় তার পরিবার। বিষয়টি গ্রামের মাতব্বররা জানার পর শিশুটির বাবা গোবিন্দ দাসকে ডেকে এনে শ্মশ্মানে মরদেহ না রাখার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে সমাধি দেওয়া মরদেহ তুলে পানিতে ফেলে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সন্তানের মরদেহ শ্মশ্মানে রাখতে বাবার শত অনুরোধ আর পায়ে ধরে কান্নাও মন গলাতে পারেনি মাতব্বরদের। এক পর্যায়ে মাতব্বরদের চাপের মুখে সন্তানের মরদেহ সমাধি থেকে তুলতে বাধ্য হন হতভাগা বাবা। পরে বস্তাবন্দি করে ফেলে দেওয়া হয় কালনী নদীতে। প্রলয়ের এমন পরিণতি দেখে অপর শিশু সূর্য দাসের পরিবারও তার মরদেহ বস্তাবন্দি করে নদীতে ফেলে দেয়।

শিশু প্রলয় দাসের বাবা গোবিন্দ দাস বলেন, ‘বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশশ্মানের দেয়াল সংলগ্ন মাটিতে সমাধি দেই। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ পঞ্চায়েতের লোকেরা আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন৷ আমি লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তারা আমার কথা শুনেননি। অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় আমি ছেলের লাশ তুলে বস্তাবন্দি করে লাশ কালীন নদীতে ফেলে দেই।

এ বিষয়টি সচেতন মহলের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রয়া বিরাজ করে। ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে সচেতন মহলে।

ইএইচ