খুলনায় ৫ বছরে কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর চিংড়ি ঘের

খুলনা প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
খুলনায় ৫ বছরে কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর চিংড়ি ঘের

খুলনায় বিভিন্ন কারণে গত পাঁচ বছরে কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর চিংড়ি ঘের। মূলত নদী ও খাল ভরাট এবং দখল, লোনা পানির উৎস কমে যাওয়া, ভাইরাসের সংক্রমণ, আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণে চাষিদের অনাগ্রহ ও রোগমুক্ত পোনা না পাওয়ায় চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন অনেকে। ঘেরের জমি বিক্রি করে পেশাও বদলেছেন কেউ কেউ। এতে উৎপাদনের পাশাপাশি রফতানির পরিমাণও কমেছে চিংড়ি খাতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকট কাটাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই।

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খুলনার ৯ উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মিঠা ও লবণাক্ত পানি মিলিয়ে চিংড়ি ঘের ছিল ৫৬ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২৭ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন চিংড়ি। গেলো অর্থবছরে সেই ঘেরের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৯৯ হেক্টর।

উৎপাদন হয়েছে, ২৩ হাজার ৪২২ মেট্রিক টন।  অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে জেলায় চিংড়ি ঘের কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর। আর এ সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন কমেছে ৩ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন। খুলনা জেলায় বর্তমানে ১ লাখ ২৫ হাজার চিংড়ি চাষি আছেন। পরিকল্পিতভাবে চিংড়িকে সংকটে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

ডুমুরিয়ার চাষি অলোক মণ্ডল বলেন, ‘এলাকার বিভিন্ন খাল ভরাট হয়ে দখল হয়ে গেছে। সময়মতো পানি পাই না। পানি ছাড়া কি মাছ চাষ সম্ভব। আবার পোনা বা রেণুরও খুব সংকট। টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিতে হবে।’

একই এলাকার সুজন পাল বলেন, ‘আমাদের এলাকার অনেকেই ঘেরের জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। জমির লিজ মূল্য বেশি, খাবার ও পোনাসহ সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বগতি। এক্ষেত্রে আমাদের মতো ছোট ছোট চাষিদের টিকে থাকা খুব কঠিন। সরকারি প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানাই।’

কয়রা উপজেলার চরামুখা গ্রামের ইয়াসিন কবীর নিজের চার বিঘা জমিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছেন। বেড়িবাঁধের নিচে পাইপ বসিয়ে ঘেরে লবণপানি ঢোকাতেন তিনি। তবে চলতি বছর বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় সেই পাইপ অপসারণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ইয়াসিনসহ ওই এলাকার সব ঘেরে চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি এম এ হাসান পান্না বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী। অথচ এক শ্রেণির লোক লবণপানির বিরোধিতা করে আসছে। তাদের টাকা দিলে আবার পানি ঢুকতে দেয়া হয়। এ এলাকা লবণপানির; কিন্তু আপনি লবণ পানি ঢুকতে দেবেন না, আবার ভালো পোনাও বাজারে আসছে না; তাহলে চাষিরা দাঁড়াবে কীভাবে। কয়েকদিন পর পর শুনি লবণসহিষ্ণু এত কিছু আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলো বাস্তবে কতটা আছে? নাকি সব কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। চিংড়ি চাষ টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিত পরিকল্পনার দাবি জানাই।’

আর চিংড়ির উৎপাদন ঠিক রাখতে লবণপানির সঙ্গে ফসলের দ্বন্দ্ব নিরসন জরুরি বলছে মৎস্য বিভাগ। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘কোন এলাকায় কোন ফসল উপযোগী সেটি বিবেচনায় এনে অঞ্চলভেদে চাষাবাদ নির্দিষ্ট করা এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে লবণপানি ও চিংড়ির অঞ্চল আলাদা করে দিতে হবে। এভাবে উৎস বন্ধ হতে থাকলে চিংড়ি উৎপাদন সঙ্গতকারণেই ব্যাহত হবে; সে সঙ্গে কমবে রফতানি আয়ও।’

তবে জেলায় ঘের কমলেও নতুন চাষির সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখ করে মৎস্য বিভাগের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানান এ কর্মকর্তা।

বিআরইউ