শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বন বিভাগের বৃক্ষ মেলা। অথচ কিছুই জানেন না শরীয়তপুরের বন বিভাগ। বৃক্ষমেলার মাঠ জুড়ে ফুসকা-চটপটিসহ কসমেটিকস, প্রসাধনীর দোকান। আর এক কোণে পড়ে রয়েছে একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান।
এমন মেলাকে কেউ বলছেন গাছের সঙ্গে তামাসা, আবার কেউ বলছেন বৈশাখী মেলা বা বাণিজ্য মেলা। বৃক্ষমেলার মূল ফটকে মেলার আয়োজক বন বিভাগ লেখা থাকলেও বন বিভাগ জানিয়েছে তারা কোনো মেলার আয়োজন করেনি।
অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে মেলাটি বন বিভাগের। তারা শুধু সার্বিক সহযোগিতায় করছেন। তবে বৃক্ষমেলার নামে এমন আয়োজন মানতে পারছেন না জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ প্রাঙ্গণে ১৫ দিনের মেলার আয়োজন করা হয়। যা ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৫ জুলাই শেষ হওয়ায় কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে মেলায় বসা ৩৯টি দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, ফুসকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনীসহ শিশুদের খেলনা ও রাইড। মেলার এক কোণে পড়ে রয়েছে মান্নান নার্সারি নামের শুধুমাত্র একটি গাছের চারা বিক্রির দোকান।
মেলায় বসা দোকানিদের কোনো প্রকার ভাড়া নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে দোকানদের মধ্যে অনেকেই বলছেন প্রতিদিন ১ হাজার বা তার চেয়ে কিছু কমবেশি ভাড়া দিতে হবে আয়োজক কমিটিকে।
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, মেলার মাঠের প্রধান অংশসহ পুরো জায়গা জুড়ে ফুসকা, চটপটি, আচার, কসমেটিকস, প্রসাধনী, দা-বটির দোকান। মেলায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীরা সেসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন এবং কেনাকাটা করছেন। তবে চারা বিক্রির দোকানটিতে তেমন কোনো ভিড় ছিল না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার টাকার গাছের চারা বিক্রি না হলেও অন্যসব দোকানে মালিকদের গড় বিক্রি ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
মো. আনোয়ার হোসেন নামের এক দা-বঁটি বিক্রেতা বলেন, এখানে মোট ১৫ দিন মেলা হওয়ার কথা রয়েছে। এখনো পর্যন্ত আমার কাছ থেকে কেউ কোনো ভাড়ার টাকা উঠায়নি। তবে তাদের ভাড়া দিতে হবে। রাইডের মালিকসহ কয়েকজন দায়িত্বে রয়েছে। তারা আমাদের থেকে ভাড়া নিয়ে মেলার আয়োজকদের বুঝিয়ে দিবেন।
শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলার একপাশে রয়েছে ভূতের বাড়ি। দোকানটির কর্মচারী ফজল বলেন, একটি টিকিট আমরা ৪০ টাকায় বিক্রি করি। এখানে শিশুদের বিনোদন দেয়া হয়। প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়। তবে ভাড়ার বিষয়টি আমি কিছু জানি না। এটা মালিক পক্ষ ভালো জানেন।
মেলায় বসা একমাত্র নার্সারিটির মালিক মো. মান্নান হাওলাদার বলেন, আমার মূল নার্সারি মাদারীপুরে। তবে একটি বাগান শরীয়তপুরের পশ্চিম কোটাপাড়া এলাকায়ও রয়েছে। বৃক্ষমেলায় একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান, বিষয়টি তেমন ভালো দেখায় না। অন্য নার্সারি মালিকদের আসতে বলা হলেও, তারা আসেনি।
গোসাইরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন শিকদার বলেন, বৃক্ষমেলাটি কী বৃক্ষমেলায় রূপান্তর হলো নাকি আনন্দ মেলায় রূপান্তর হলো? এ প্রশ্ন আমার। আসলে যে উদ্দেশ্যে এখানে বৃক্ষমেলাটি আয়োজন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। এটা নামে মাত্র বৃক্ষমেলা বলেই আমি মনে করি।
গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, আমি গত ৩০ জুন দায়িত্ব শেষ করেছি। আমার শেষ অফিসের দিন দেখলাম ইউএনও মেলার জন্য মাঠে দোকান নির্মাণ করছেন। কিন্তু আমি জানতাম না, এখানে কীসের মেলা হবে। বৃক্ষমেলায় সাধারণত গাছের চারা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু মেলায় মাত্র একটি নার্সারির দোকান থাকবে, এ কেমন বৃক্ষমেলা! বিষয়টি গোসাইরহাট উপজেলাবাসীর জন্য উজ্জ্বলসহ দুঃখজনক। এটা কখনোই বৃক্ষমেলা হতে পারে না।
মেলার আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে গোসাইরহাটে কোনো বৃক্ষ মেলায় আয়োজন করা হয়নি। শুনেছি নার্সারি মালিক সমিতি, উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মেলায় আয়োজন করেছে। তাছাড়া মেলা আয়োজন করার মতো আমাদের এখন কোনো বাজেট নেই।
তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি মেলাটির আয়োজন করেছে বন বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে, তা মূল ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাটিকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। আর ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সরকারি মাঠে মেলা করতে আবার কীসের ভাড়া?
ইএইচ