টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী

বৈরান নদীতে বাঁধ দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ: জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি

সৈয়দ সাজন আহমেদ রাজু, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) থেকে প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৪, ১০:৪৪ পিএম
বৈরান নদীতে বাঁধ দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ: জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে বৈরান নদীতে বাঁধ ভেঙে ব্রিজ নির্মাণ করায় নদীর নিম্নাংশের ৩৪ কিলোমিটার অর্ধমৃত অবস্থা বিরাজ করছে। পানির প্রবাহ না থাকায় পোল্ট্রির বর্জ্য আর ময়লা আবর্জনা পচে নদীর পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অন্তত ১৫টি খাল পানিশূন্য হয়ে জীববৈচিত্র ও প্রাণবৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি এলাকার ঝিনাই নদী থেকে বৈরান নদীর সৃষ্টি। নদীটি ধনবাড়ীর, গোপালপুর, ভূঞাপুর ও ঘাটাইলে স্বর্পিলাকৃতিতে ৩৬ কিলোমিটার ঘুরে পুনরায় টিকরী এলাকায় ঝিনাই নদীতে যুক্ত হয়েছে। ১৫টি খাল ও অসংখ্য বিলের মাধ্যমে অন্তত ২২ গ্রামের মানুষ উপকৃত হন।

অপরদিকে শতশত জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ছয়মাস ধরে ওই নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় খাল-বিল শুকিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থা বিরাজ করছে। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাইস্কা বাজারের কাছে বৈরান নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ধনবাড়ী উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, ধনবাড়ী-মুশুদ্দি সড়কের পাইস্কা বাজারের কাছে বৈরান নদীর ওপর ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার প্রস্থ ব্রিজ নির্মাণাধীন। ওই ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৬২ টাকা। ব্রিজটি নির্মাণ করছে মেসার্স ফ্রেন্ডস কন্সট্রাক্শন এন্ড মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ (জেবি)। ২০২৩ সালের ৬ জুন শুরু হওয়া এই ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষের সময় ছিল চলতি বছরের ১১ মে।

জানা যায়, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরুর পরপরই ঠিকাদার ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য কালভার্ট বা ফুটব্রিজ না করে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করেছে। এতে পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এই পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় ব্রিজের নিম্নাংশের পাইস্কা ইউনিয়নের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত।

সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর দুই ধারে ব্রিজের নির্মাণসামগ্রী পড়ে আছে। নির্মাণ কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। মাঝের দুইটি পিলার ও গার্ডারসহ ফাউন্ডেশনের কাজ শেষ হয়েছে। ঢালাইয়ের কাজ বাকি রয়েছে। বর্তমানে একাংশে পাটাতন বিছানো রয়েছে। নদীর ওপর নির্মিত বাঁধে বিভিন্ন বয়সের মানুষ পায়চারি করছে।

তাদের অধিকাংশ বাঁধটি ধ্বসে পানি প্রবাহের পথ উন্মুক্ত হলে উপকৃত হবেন বলে জানালেন। তবে কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি নন।

স্থানীয়রা জানান, যেনতেনভাবে কাজ করায় ব্রিজের একাংশের পাটাতান সপ্তাহখানেক আগে রডসহ পড়ে গেছে।

গোপালপুরের আমিনুল ইসলাম বলেন, গত ছয়মাস ধরে বৈরান নদীতে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। নদীর সাথে যুক্ত পুকুরজানি খাল, কুইচামারা খাল, চন্দবাড়ী খাল, ভেদাখালি খাল, মির্জাপুর খাল, খাগবরিয়ান খাল, পলশিয়া খালসহ অন্তত ১৫টি খাল অসংখ্য নালা, বিল শুকিয়ে গেছে।

এদিকে হাদিরা ও ধোপাকান্দি ইউনিয়নে নদীর ধারে গড়ে ওঠা অসংখ্য মুরগির খামারের বিষ্ঠা আর ময়লা আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ হয়ে গেছে।

কোনাবাড়ী এলাকার ইউসুব আলী জানান, খালবিল শুকিয়ে গেছে। আর নদীগুলোতে কচুরিপানার স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে।

নন্দনপুরের আব্দুল জলিল রতন বলেন, পাইস্কায় বাধ দিয়ে আমাদের জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। নদীতে জমে থাকা কচুরিপানার স্তুপের ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। পানি প্রবাহের পথ উন্মুক্ত না হলে নদীটিই মরে যাবে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার মো. রফিকুল ইসলাব বাবুল বলেন, আমরা শিডিউল মেনেই কাজ করছি। দ্রুতই কাজ শেষ করবো।

গোপালপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ হাসান জামি বলেন, বৈরান নদীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদীটি খনন করা হয়েছে। একজন ঠিকাদারের সুবিধা দেখে পুরো এলাকার জনসাধারণের ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জলজ প্রাণি মরে যাচ্ছে। খালবিলের পানি শুকিয়ে গেছে। এলাকার জনসাধারণও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। আমরা চাই ব্রিজও নির্মাণ হউক। পানি প্রবাহের পথও উন্মুক্ত করা হউক।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ধনবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, আমি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ইএইচ