আমার সংবাদে খবর প্রকাশে নিহত রঞ্জিতার পরিবারের পাশে ইউএনও

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
আমার সংবাদে খবর প্রকাশে নিহত রঞ্জিতার পরিবারের পাশে ইউএনও
ছবি: আমার সংবাদ

‘ঋণের চাপে ৭ মাস ঘরছাড়া, অত:পর মায়ের মৃত্যুতে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরল ছেলে’ শিরোনামে দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর রথযাত্রায় গিয়ে বিদ‍্যুতায়িত হয়ে নিহত রঞ্জিতার হতদরিদ্র অসচ্ছল পরিবারের খোঁজ খবর নিতে ছুটে যান বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহসিয়া তাবাসসুম।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল ১১টায় উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের চেলো হিন্দুপাড়া গ্রামের নিহত রঞ্জিতার বাড়িতে সরেজমিনে হাজির হন ইউএনও মুহসিয়া তাবাসসুম।

সরেজমিনে জানা যায়, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন বগুড়ার শাজাহানপুরের গোহাইল ইউনিয়নের চেলো হিন্দুপাড়া গ্রামের সুদেব চন্দ্র মোহন্ত (৭০)। পেশায় তিনি একজন কর্মকার। স্ত্রী রঞ্জিতা (৫৫) সহ পরিবারে তার তিন কন‍্যা সন্তান চন্দনা (৩৫), বন্দনা (৩০), রঞ্জনা (২৫) এবং এক ছেলে সুশীল চন্দ্র মোহন্ত (২৮)।

পৈতৃক সূত্রে বাবার দেড় শতক বাড়ি ভিটা ছাড়া তার আর কোনো জমিজমা নেই সুদেবের। কেবল একটি ঘর আর বারান্দায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন সুদেব। পরিবারের ভরন পোষণ মেটাতে গিয়ে লেখাপড়া শেখানোর সুযোগ হয়নি সন্তানদের। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় অনেক কষ্টে বড় মেয়েকে বিয়ে দেন। পরবর্তী দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে টানতে শুরু করেন ঋণের বোঝা।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সনাতন ধর্মের নীতি অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে দিতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। যা একটি হতদরিদ্র অসচ্ছল পরিবারের পক্ষে কোনো ভাবেই পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমতাবস্থায় সুদেব প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। পরে আবারও ব্র‍্যাক এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি দুইটি ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয় সুদেবের। কিস্তির চাপে সুদেব স্থানীয় এলাকার কিছু দাদন ব‍্যবসায়ীদের থেকে অধিক মুনাফায় আবারও প্রায় ৪ লাখ টাকা ঋণে পড়েন। একদিকে এনজিওর কিস্তির চাপ অন‍্যদিকে দাদন ব‍্যবসায়ীদের সুদের টাকার চাপে শেষমেষ পরিবার নিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন সুদেব।

রবিবার (৬ জুলাই) বগুড়া শহরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা প্রতি বছরের ন‍্যায় এবছরেও পালিত হচ্ছিলো। রবিবার বিকেলে সেই রথযাত্রায় অংশ নিতে যায় সুদেবের স্ত্রী ও তার এক নাতনী সহ বড় মেয়ে চন্দনা। একপর্যায়ে রথযাত্রা বগুড়ার সেউজগাড়ী ইস্কন মন্দির থেকে বের হয়ে আমতলা মোড়ে পৌঁছাতেই রথযাত্রাটি বিদ‍্যুতায়িত হয়ে সাধুসহ ৫জন নিহত ও প্রায় ৪০ জন আহত হন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহত হন সুদেবের স্ত্রী এবং আহত হন মেয়ে চন্দনা। ঘটনার পর আহত মেয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্ত্রী রঞ্জিতার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেন সুদেব ও তার ছেলে।

গত সোমবার (৮ জুলাই) বেলা ১২টায় নিহত রঞ্জিতার মরদেহ সৎকার কাজ সম্পন্ন করা হয়।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহসিয়া তাবাসসুম সাক্ষাতে দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, রথযাত্রা দেখতে গিয়ে হতদরিদ্র পরিবারের রঞ্জিতা রানী এক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। রঞ্জিতা রানীর দরিদ্র পরিবার স্থানীয় অসাধু দাদন ব‍্যবসায়ীদের চাপে ৭ মাস যাবত ঘরবাড়ি ছেড়েছিলেন।

এমন সংবাদ দেখে তার পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা মিলে যায়। রথযাত্রায় হতাহত পরিবারের সদস্যদের মাঝে আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে জেলা প্রশাসক মহোদয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন মর্মে তাদেরকে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ থেকে তাদেরকে ঘর নির্মাণে নির্মাণসামগ্রী প্রদান করা হবে।ওই এলাকায় অসাধু দাদন ব‍্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিশেষে তিনি আরও বলেন, সমাজে সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত, অকারণে নির্যাতিত মানুষের কথা অনেক সময় আমরা জানতে পারিনা। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে এসব ঘটনা জানতে পারলে আমাদের কর্ম পদযাত্রা সুগম হবে।

বিআরইউ