কারফিউ শিথিল: স্বস্তি ফিরেছে দক্ষিণাঞ্চলে

আরিফ হোসেন,বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৪, ০৪:১৬ পিএম
কারফিউ শিথিল: স্বস্তি ফিরেছে দক্ষিণাঞ্চলে

দেশে কারফিউ শিথিল হওয়ায় ব্যাংক, অফিস-আদালতের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো খোলায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি।

বুধবার বরিশাল নগরীর সকাল ৯টা থেকে এবং নগর ব্যতীত জেলার অন্যান্য জায়গাতে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা রয়েছে। ফলে সকাল ৯টা থেকে নগরের প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার চলাচল স্বাভাবিক নিয়মে শুরু হয়েছে। সে সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরে ও বাইরে বাস চলাচলও শুরু হয়েছে আগের নিয়মে। সবমিলিয়ে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল বেড়েছে অনেকটা।

বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে এবং নগর ব্যতীত জেলার সব উপজেলায় সকাল ১০টা থেকে কারফিউ শিথিল ছিল। এ সময়ের মধ্যে স্বল্প পরিসরে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল করলেও বুধবার সকাল থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক নিয়মে বাস-থ্রিহুইলার চলাচল করছে। আর গণপরিবহনগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার বিআরটিসির ডিপো থেকে ২২টি রুটে চলাচলকারী কোন বাস চলাচল না করলেও বুধবার বেশ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে।

অপরদিকে গত ২১ জুলাই থেকে বরিশালসহ সারা বাংলাদেশের নৌ পরিবহণ ব্যবস্থাও বন্ধ আছে। বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে কোনো লঞ্চ চলাচল না করলেও বরিশাল-ভোলা ও বরিশাল-মেহেন্দিগঞ্জ রুটে স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সে সঙ্গে নদীবেষ্টিত বরিশালের হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও ভোলা সদরের মানুষ বিভাগীয় সদর দপ্তরের সঙ্গে ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা (ট্রলার) এর মাধ্যমে যাতায়াত করছে।

বিআইডব্লিউটির বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ দেয়নি, তবে সিদ্ধান্ত দিলে তাৎক্ষণিক লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। এছাড়া দিনের বেলা কারফিউ শিথিল থাকলেও সন্ধ্যা ৬টার পর কারফিউ বহাল থাকায় রাতে বরিশাল-ঢাকা রুটে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো চলাচল করবে কি না এ নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কোম্পানিগুলো।

এদিকে সকাল ১০টা থেকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা দোকান-পাটসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করে।

অপরদিকে সকাল ১০টার দিকে ব্যাংক, অফিস ও আদালত পাড়ায় মানুষের ভিড় দেখা গেছে। চলতি সপ্তাহের প্রথম খোলার দিনে জমে যাওয়া কাজের চাপ বেশি থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে সর্বোচ্চ গ্রাহক ও নাগরিক সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  

যদিও বরিশালের সর্বত্র ইন্টারনেট ব্যবস্থা সচল না হওয়ায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে কারফিউ শিথিল থাকলেও এ সময়ে কোনো ধরনের মিছিল-সভা, সমাবেশ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. জিহাদুল কবির ও জেলার পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম। সে সঙ্গে নগর ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সদস্যরা সকাল থেকে টহল দিচ্ছে। এছাড়া নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়গুলোতে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

বরিশালে বিএনপি-জামায়াতের ৭৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

বরিশাল নগরীসহ জেলা থেকে গত দুইদিনে বিএনপি-জামায়াতের ৭৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে তাদের সবাইকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার প্রণয় রায় জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটনের চার থানায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা করেছে। এছাড়া এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মোট পাঁচটি মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা দুই হাজার ৭৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে বরিশাল জেলা পুলিশের সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, তার ১০ থানা এলাকা থেকে গত দুইদিনে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাকেরগঞ্জ থানায় করা একটি নাশকতার মামলায় সবাইকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ইএইচ