প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা পানিবন্দি কেসিসির দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা

খুলনা ব্যুরো প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম
প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা পানিবন্দি কেসিসির দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা

বছরের পর বছর বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দুটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। দুই দফায় প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা পানিবন্দি থাকেন এসব এলাকার মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ষাটের দশকে নির্মিত স্লুইচ গেটগুলোর অধিকাংশ অকার্যকর ও অব্যবস্থাপনার কারণে ভৈরব নদের জোয়ার পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে।

এছাড়াও অপরিকল্পিত সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করা, উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের ধীরগতিসহ কেসিসির কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় নগরবাসীর দুর্ভোগ এখন চরমে।

খুলনার টুটপাড়া দিলখোলা রোডের বাসিন্দা দিনমজুর শ্রমিক মো. দুলাল বাড়িতে বুধবার বিকাল ৪টায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতর হাঁটু সমান পানি। নেই টয়লেট বা রান্নার ব্যবস্থা। ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র পানিতে তলিয়ে। দেখে মনে হবে এটা যেন কোনো বানভাসি এলাকার চিত্র।

তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমের ৩ মাস এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। প্রতিদিন দুপুর আড়াইটা থেকে বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করে। সেই পানি প্রায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত থাকে। আবার রাত আড়াইটা থেকে পানি উঠতে শুরু করে। দুই দফায় প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা পানিবন্দি থাকেন তারা। ফলে অমানবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি দিনে অধিকাংশ সময় পার হয় পানির হাত থেকে আসবাবপত্র বাঁচাতে।

দুলালের স্ত্রী কোহিনুর বেগম জানান, নোংরা এসব পানির কারণে রোগব্যাধির আশঙ্কার তো আছেই তারপরও সাপ, পোকামাকড়, ড্রেনের ময়লা ঘরে প্রবেশ করে। রান্না ঘরে হাঁটু সমান পানি আবার রাইস কুকারে রান্না করতে গেলে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের ভয় রয়েছে। অধিকাংশ দিনই শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে।

জোয়ারের পানিতে নাকাল নগরীর খানজাহান আলীর রোডের বাসা-বাড়ি, দোকান, খুলনা কলেজিয়েট স্কুল, মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়াটার্সসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়।

বিশেষ করে টুটপাড়া মেইনরোড, বড় খালপাড়, মোল্লাপাড়া, জিন্নাহপাড়া, টিবি ক্রসরোডসহ ৩০ ও ৩১নং ওয়ার্ডের একাধিক এলাকা প্লাবিত হয় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। পানিবন্দি এসব মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।

সূত্র বলছে, নগরীর পানি অপসারণের জন্য ষাটের দশকে নির্মিত স্লুইচ গেটগুলোর অধিকাংশ অকার্যকর ও অব্যবস্থাপনার কারণে ভৈরব নদের জোয়ার পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। এছাড়া অপরিকল্পিত সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করা, উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের ধীরগতিসহ কেসিসির কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় নগরবাসীর দুর্ভোগ এখন চরমে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন মিঠু বলেন, আমার ওয়ার্ডের ইসলামপাড়া, আমতলা, মোল্লাপাড়া, মুজাহিদপাড়া এবং মতিয়াখালী এই পাঁচটা এলাকা প্রতিনিয়ত জোয়ার পানিতে প্লাবিত হয়। বছর ৩-৪ এমন হচ্ছে। আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এর একটা ব্যবস্থা করার আশ্বাস সবাই দিয়েছে কিন্তু আমরা সমাধান পাচ্ছি না। আর মূল সমস্যা হলো মাহাবুব ব্রাদার্স ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুটি স্লুইচ গেট ভেঙে ফেলেছে। আর এদের কাজ এত ধীরগতি যার কারণে আমাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। মেসার্স সেলিম নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানও বাঁধ দিয়ে কাজ করছে। এছাড়া স্লুইচ গেটটা একেবারে খারাপ। আমার নিজের বাড়িতে দীর্ঘদিন পানি উঠতেছে। আমি নিজেই অসুবিধায় আছি আমার জনগণও অসুবিধায় আছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমি কাউন্সিলর, আমাদের একটা প্রসেসিং এর মাধ্যমে জানাতে হয়। আমাদের কিছু প্রজেক্ট দেওয়া আছে কিন্তু সেগুলো পাস হয়ে আসেনি। তারপরও আমরা মেয়র মহোদয়ের কাছে যাই এবং বলি। তিনি আশ্বাস দেন, কিন্তু আসলে কবে নাগাদ হবে এটা মেয়র মহোদয় ও উপরমহলের কর্তৃপক্ষ জানেন।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধারাবাহিক দুর্যোগের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এখানে মূল যে সমস্যাগুলো হচ্ছে। আমাদের নগরপিতা এবং সংশ্লিষ্ট যে দপ্তরসমূহ রয়েছে সেই দস্তরের কর্মকর্তারা উদাসীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং কোন প্রকার জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতার মধ্যে নাই। যে কারণে স্লুইচগেটগুলো একেবারেই অচল এবং জোয়ারের পানি ঘরে উঠে যায়। একেবারে ঘর, বাথরুম, টয়লেটসব মিলে একাকার হয়ে যায়। মানুষের জীবন শুধু অসহনীয় নয়, অসহনীয়তারও চরম পর্যায়ে ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং এ অঞ্চলের মানুষ কেমন করে বসবাস করে এটা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। নির্বাচন আসলে দেখি প্রতিশ্রুতির ঝুলি নগরপিতাসহ সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের। কিন্তু নির্বাচনের পরে আদৌ দায়িত্ব পালনের কাছাকাছি যান না।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, চলমান উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলেই মিলবে সমাধান। খুলনা শহরের পানি অপসারণের জন্য ৭টি পয়েন্টে ১৯টি স্লুইচ গেট ও ৩৮টি আউটলেট রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি স্লুইচ গেটে কাজ চলছে। নগরীর পানি অপসারণের জন্য রূপসায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বুস্টার পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশাকরি ৬ মাসের মধ্যে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার সমস্যা কাটবে।

ইএইচ