সাগরে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

বরগুনা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম
সাগরে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

সাগরে মাছ ধরার ক্ষেত্রে সরকারের দেওয়া টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৩ জুলাই রাত ১২টা থেকে ইলিশ মাছ ধরার কর্মযজ্ঞ শুরু হলে বরগুনার জেলেপাড়াগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় জেলেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বেকার হয়েছিল জেলার উপকূলীয় জনপদের জেলেপাড়ার বাসিন্দারা। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারি সহায়তা দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের জেলে মোশাররফ হাওলাদার বলেন, এ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের বাইরেও অনেক জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত হয়েছে কিছু সংখ্যক। যারা নিবন্ধিত হয়েছে তারা নিষেধাজ্ঞার সময় সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। বেশিরভাগ জেলে পরিবারের দুমাস মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে।

বরগুনা সদরের নলটোনা ইউনিয়নের জেলে শামসুল আলম বলেন, ‘দীর্ঘ দুমাস পর নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের কিছুটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। অনেকের ঋণ রয়েছে। কিন্তু দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন মাছ ধরে নিজেও চলতে হবে, ঋণও পরিশোধ করতে হবে। এবার অনেক আশায় নিয়ে আমরা সাগরে নেমেছিলাম। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ পাচ্ছি না। গত ২/৩ দিন যে মাছ পেয়েছি তাতে খরচই পোষাবে না। গত বছরও আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। এ বছর ভাগ্যে কি রয়েছে জানি না।

বরগুনা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, এসব জেলের দাবি, তারা এখন সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ পেলে নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

একই এলাকার জেলে মো. নাসির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখন সাগরে যদি মাছ পাই, তবে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারব।’

পাথরঘাটার চার ভাইবোন ট্রলারের স্বত্বাধিকারী মো. কামাল বলেন, নিষেধাজ্ঞা জারির আগেও সাগরে তেমন মাছ পাইনি। এর মধ্যে আবার নিষেধাজ্ঞা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। চরম অভাব অনটনের মধ্যেই দিনাতিপাত করতে হয়েছে।

বরগুনা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে উপকূলের জেলেরা কঠিন সময় পার করেছেন। তবে তারা আশা করছেন, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে জালে যে হারে ইলিশ ধরা পড়েছে, এখন তার থেকেও বেশি ইলিশ পাবেন। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পেলে দুরবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে।

পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং যা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, বরগুনা জেলায় মোট ৩৬ হাজার ২২ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার সময়ে অবৈধ জাল বিনষ্ট করা ও অসাধু জেলেদের আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ৬৫ দিন শেষে বরগুনার জেলেরা সমুদ্রে আশানুরূপ মাছ পেলে অর্থনৈতিক দুর্দশা-দৈন্য কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

ইএইচ