বাবর ভাই আপনি কোথায়-রনি ভাই কোথায়। আমাকে বাঁচান ভাই। আমি এখানে মরে যাচ্ছি। আমাকে পাথর মারতেছে। অলরেডি অনেকজন মারা গেছেন। আমি এখানে লটকে আছি। নিজের জীবন বাঁচার আর্তনাদ করেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কর্মি সোবহান সাগর। তাঁর পিঠে-বুকে প্রচন্ড আহত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্নিকটে চিকিৎসাধীন আছেন।
২৮ জুলাই বিকেল ৫টায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের কর্মি জালাল মো. ইকবাল ও মো. সোহেলের সাথে ও তাদের পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাতের রগ কেটে দেওয়া এবং ডান চোখ উপড়ে ফেলা ও ২ পা ভেঙ্গে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া জালালের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় জালাল ইকবাল ও সোহেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বীভৎস ঘটনার বর্ণনা দেন এবং বারে বারে বলেন বাবর ভাই না হলে আমরা কেউ বাঁচতাম না এছাড়া কমপক্ষে ১০০ জনের লাশ পড়তো। তাঁদের ঘটনার বর্ণনা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নাই।
প্রায় ৮ মিনিট চট্টগ্রামের মানবিক ও আ.লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে প্রধানমন্ত্রী।বাবর ঘটনার সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরেন এবং মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ প্রধানমন্ত্রীকে দেখান।
আ.লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আহত ছাত্রলীগের কর্মিরদের সরাসরি অবস্থা দেখেন,স্বজনদের সাথে কথা বলে এবং উনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে এবং দেখে আবেগাপ্লুত হন। সকলকে আর্থিক সহযোগিতাসহ যাবতীয় সহযোগিতা করার আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রীর।ছাত্রলীগের কর্মীর মুখে বাবরের নাম বারবারে শুনে প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলে জানান চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. মনির উদ্দিন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
উল্লেখ্য গত ১৬ জুলাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়।মুরাদপুর এলাকায় সংঘর্ষের সূচনা হয়ে বহদ্দারহাট থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল।সে সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর আড়ালে শত শত দুর্বৃত্তরা সরকারি স্থাপনা ও সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করার জন্য ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করেন।তখন
ছাত্র ও যুবলীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ করার চেষ্টায় বিচ্ছিন্ন থাকা কিছু ছাত্রলীগের কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া দেন দুর্বৃত্তরা। তাঁরা প্রাণে বাঁচতে একটি পাঁচতলা ভবনে উঠেন।সেখানে গিয়ে প্রায় ৬০-৭০ জনের দল তাদের সম্পূর্ণ মেরে ফেলার চেষ্টা করেন।অনেকে প্রাণে বাঁচতে ভবনের ছাদের পানির পাইপ বেয়ে নামতে চেষ্টা করেন।তখন অনেক ছাত্রলীগের কর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে দেন।আবার অনেকে লাফ দেন এবং অনেকে জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে থাকেন। যারা নিচে পড়েন, তাঁদের নিচে উপস্থিত দুর্বৃত্তরা ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেন। মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ঝুলে থাকাদের পাথর নিক্ষেপ করেন উপর ও নীচ থেকে।ছাদের উপর যারা ছিলেন, তাঁদের মারতে মারতে রক্তাক্ত করেন এবং তাদের নেতার নাম জিজ্ঞেস করেন।
একজন কর্মি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী। তখন দুর্বৃত্তরা বলেন– মহিউদ্দিন চৌধুরীর মারা গিয়েছেন। বর্তমান নেতার নাম বল।জবাবে বলেন বাবর ভাই। এসময় মোবাইলে বাবর জানতে পারেন তাঁর কর্মীরা জীবন মৃত্যুর সন্নিকটে। তখন তিনি অন্য প্রান্তে অবস্থানে ছিলেন। তখন তিনি জীবনের কোন মায়া না করে সকল ছাত্রলীগের কর্মীদের উদ্ধার করেন এবং দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কোট আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ জুলাই বিভীষিকাময় দিনে গুরুতর আহত হন চট্টগ্রাম কলেজের মোহাম্মদ ইকবাল।ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয় তাকে।
একই কলেজের মোহাম্মদ পারভেজকে প্রচণ্ড মারধর করে ছাদ থেকে ফেলে শরীরের প্রতিটা হাড় ভেঙ্গে ফেলছে। মোহাম্মদ সোহেলর নৃশংসভাবে মেরে মাথার খুলি ভেঙ্গে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। মো. শ্রাবণকে নৃশংসভাবে মেরে হাত পা ভেঙ্গে ছাদ থেকে ফেলে দেন।বীভৎস আহতের শিকার হন মাহিবি তাজওয়ার চৌধুরি,ইরফানুল আলম চৌধুরী, ইয়াসির আরফাত রিকু,তারিবুন চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল সাইমুন,এম ইউ।ওয়াহিদুর রহমান সুজন,জাহেদ অভি,
মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, ধীমান দাশ গুপ্ত, মেহরাজ সিদ্দিক পাবেল, মোহাম্মদ নাহিদ, আজিমউদদ্দৌলা, মোহাম্মদ আলমগীর, তানভীর হোসেন, মনিরুল ইসলাম মনিরআনোয়ার হোসেন, হাসমত খান, আতিফজাহিদ হাসান সাইমন,অর্ণব দেব,জামশেদ উদ্দীন, আব্দুল মালেক রুমি, নাজিম উদ্দীন, মোস্তফা আমান, মো. হোসাইন চৌধুরী, ইমতিয়াজ চৌধুরী বাবর, তারেক রহমান, আকবর খান, মোহাম্মদ ফুরকান, বিশাল হাজারী, গোবিন্ন দত্ত, শাহেদ হোসেন রিফাত, শাফায়েত ফাহিম, ফারহান উদ্দীন খান, নাজমুল হাসান নীরব, এইচ এম জাহিদ(মহসিন কলেজ, মো. কাউসার, ইফতেশাম উদ্দীন(মহসিন কলেজ), পাবেল পিয়াল, মোহাম্মদ জাবেদ ইকবাল, মো. আরিফ উদ্দীন,মিজবাহ উদ্দিন,মাঈনুর রশিদ মারুফ, মো. ফয়েজ, মোহাম্মদ সাকেত, মো. জুনায়েদ মাহমুদ, আরেফিন রিয়াদ, মোহাম্মদ আবু মেশকাত, রবিউল ইসলাম, রাব্বি এহসান, চৌধুরী আলিফ, তৌসিফ ধৌলত গীর, মোহাম্মদ সম্রাট চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মদ রাহি, মুশফিকুল হায়দার, সায়েদ আব্দুল্লাহ নাহিদ, মো. ফয়সাল, ইরফানুল আলিফ,আশরাফ আরফাত নিরব(ইউএসটিসি), ইকরামুল আদিব, নাবিল নিহাল, সাঈদুল সাকিব, হাসান মুরাদ, মোহাম্মদ অনির্বাণ পালিত ও অমিথ দে।
বিআরইউ