আন্দোলনে রণক্ষেত্র বরিশাল: আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৪, ০৪:৪৯ পিএম
আন্দোলনে রণক্ষেত্র বরিশাল: আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
  • প্রতিমন্ত্রীর বাসায় হামলা, ২৭ মোটরসাইকেলে আগুন
  • ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন
  • বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবির অসহযোগ ঘিরে বরিশাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। রোববার বেলা ১২টার পর থেকে মহাসড়কে আগুন দিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে পড়ে। মহাসড়কের নথুল্লাবাদ থেকে চৌমাথা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দখলে চলে গেছে।

বেলা পৌনে ১টার দিকে চৌমাথা থেকে নবগ্রাম সড়কে ঢুকে দখল করে নেয় আন্দোলনকারীরা। তারা নবগ্রাম সড়কে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীমরের মমতাজ ভিলায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

তার বাসার গেটের মধ্যে এবং সামনের সড়কে অন্তত ২০ থেকে ২৭টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এতে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এর আগে বেলা ১১টা থেকে চৌমাথা থেকে নবগ্রাম সড়কে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সশস্ত্র অবস্থান করছিল। এ সময় যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে। মারধর করা হয়ে কিছু ছাত্রকে।

তবে ছাত্র আন্দোলনকারীদের স্রোতে সরে যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এ কারণে বেলা সাড়ে ১১টার পর আর মহাসড়কে যান চলাচল করছে না।

অন্যদিকে দুপুর দুইটার দিকে আন্দোলনকারীরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। অপরদিকে ছাত্রলীগ যুবলীগ নগরীর প্রাণ কেন্দ্র সদর রোডে অবস্থান করছে। তারা অশ্বিনী কুমার হল সংলগ্ন বিএনপি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সোহেল চত্বরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অবস্থান করছে ক্ষমতাসীনরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নবগ্রাম সড়কে প্রতিমন্ত্রীর বাসার কাছাকাছি পুলিশ অবস্থান নিয়ে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে।

আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

বরিশালে মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নামে এক নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

রোববার দুপুর ২টার দিকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এস এম সায়েম সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আমার সংবাদকে জানান, নিহত টুটুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর আঘাতগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে মাথার খুলির ভেতরে থাকা অনেক কিছুই বাইরে বের হয়ে গেছে। এক কথায় রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত টুটুল চৌধুরী মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ দিপু। স্থানীয়রা ও নিহতের স্বজনরা জানান, নগরের করিম কুটির এলাকায় আন্দোলনকারীরা আকস্মিক হামলা চালায়।

এ সময় সেখানে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতা টুটুলকে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাসায় হামলা, ২৭ মোটরসাইকেলে আগুন

বরিশালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাসভবনে হামলা হয়েছে। এ সময় তার বাসভবনের সামনে ও আশপাশে থাকা কমপক্ষে ২০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের বটতলা এলাকার করিম কুটিরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মঈন তুষার আমার সংবাদকে জানান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের বাসভবনে আকস্মিক হামলা চালানো হয়। এ সময় ওই এলাকায় যাকে পেয়েছে তাকে হামলাকারীরা মারধর করেছে এবং মন্ত্রীর বাসাসহ আশপাশের বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি মন্ত্রীর বাসার ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। আর তার বাসার সামনের নবগ্রাম রোডে থানার নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং ২৭টির মতো মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এতে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় যে ছবি তুলতে গেছে তাকেই মারধর করেছে এবং হাতে থাকা মোবাইল ভাঙচুর করেছে। আন্দোলনকারীরা কাউকে ভিডিও-ছবি তুলতে দেখা যায়নি। আর হামলার সময় মন্ত্রীর বাসার আশপাশে কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় সব কিছু নির্বিঘ্নে হয়েছে।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর

বরিশালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১২টার দিকে নগরীর সিএন্ডবি রোডে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজানুর রহমান।

তিনি আমার সংবাদকে জানান, নগরীর সিএন্ডবি রোডের কাজী পাড়া এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে কার্যালয় ভাঙচুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের থাকা জামায়াত শিবির ও বিএনপির নেতা কর্মীরা। তারা প্রথমে কার্যালয়টি ভাঙচুরে করে। পরে সেখানে থাকা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে।

বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় কার্যালয়ের সামনে থাকা দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ দেওয়া হয়। রোববার  দুপুর ১টার দিকে নগরের সদর রোডস্থ বিএনপির এ দলীয় কার্যালয়টিতে হামলা চালানো হয়। তবে এ সময় দলীয় কার্যালয়টি বন্ধ থাকায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

তারা জানান, হঠাৎ দুপুর ১টার দিকে নগরের সদর রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে কয়েকশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী জড়ো হন। এ সময় তারা দলীয় কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং পিটিয়ে দরজা-জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন। পরে তারা সেখানে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের কিছু ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে এবং দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তাতে অগ্নিসংযোগ করেন।

ইএইচ