লুটপাট, ভাঙচুর ও দখল বন্ধে কঠোর অবস্থানে বরগুনা জেলা প্রশাসন

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা থেকে প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম
লুটপাট, ভাঙচুর ও দখল বন্ধে কঠোর অবস্থানে বরগুনা জেলা প্রশাসন

বরগুনা জেলায় গত তিনদিনে শতাধিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর ও দখলের ঘটনা ঘটলে জেলা প্রশাসন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয়ে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

শেখ হাসিনার পতনের পরপরই সরকারবিরোধী ছাত্র-জনতা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে মাঠে নামলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে তার ‘ল’ চেম্বার, সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান শিহাবের বাসভবন, মজিবুল হক কিসলুর ‘ল’ চেম্বার, জেলা আওয়ামী লীগের অফিস, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলামের ‘ল’ চেম্বার, বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

বরগুনা জেলা শহরজুড়ে তৈরি হয় অরাজকতা। এদিকে আমতলীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসভবন, হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধার বাসভবনে আগুন, বরগুনা মহিলা এমপি ফারজানা সুমির কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান বাদল খানের কার্যালয়, গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান এইচএম মনিরুল ইসলামের কার্যালয়, যুবলীগ অফিস, ও পৌরসভা কার্যালয় ভাঙচুর করে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মহা. রফিকুল ইসলাম সকল প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, ভাঙচুর ও দখল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেন। উপজেলা পর্যায়ে যাতে কোনো ধরনের অরাজকতার বিস্তার না ঘটে সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের।

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা জানান, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গণউপদ্রব সৃষ্টি ও পুনরায় গণউপদ্রব অব্যাহত রাখায় একজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তিনি কোথাও কোন দূর্বৃত্তায়নের ঘটনা ঘটলে বা সংবাদ থাকলে তার মোবাইল নাম্বারে কল-মেসেজ-হোয়াটসঅ্যাপ করার জন্য অনুরোধ জানান।

তিনি আরও বলেন, পাড়ায় পাড়ায় ছাত্র-জনতার পাহারা ও প্রশাসনের টহল অব্যাহত আছে। জনস্বার্থে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে বরগুনা সদরের ভাড়ানি খালের দুইপাশে, মাছ বাজারের পাশে, লাকুরতলা ব্রিজের উভয় পাশে এবং ডায়াবেটিস হাসপাতালের পাশে রাতের আঁধারে হঠাৎ গড়ে তোলা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পরিষ্কার করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিঞার নেতৃত্বে সদরের এসিল্যান্ড আবু আব্দুল্লাহ জাহের ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার আব্দুল হাই উচ্ছেদ অভিযানে পরিচালনা করেন। উচ্ছেদ অভিযান সফল করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিঞা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী, স্বপ্ন পূরণ যুব ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ, ইসলামী আন্দোলনের ছাত্রবৃন্দ ও ছাত্র দলসহ সাধারণ জনগণকে ধন্যবাদ জানান।

সকল প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, ভাঙচুর ও দখল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম মাইকিং করিয়েছেন। যারা এ সকল অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মাইকিংএ উল্লেখ করেছেন তিনি।

গত তিনদিনে উপজেলার অন্তত অর্ধ শতাধিক লুটপাট, দখল ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীরা গাজীপুর বন্দরের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদের দোকান ভাঙচুর করে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

সন্ত্রাসীরা ৭টি দোকান ঘর দখল এবং পাঁচটি দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। শাখারিয়া স্ট্যান্ডে ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী পাঁচটি ঘর ভাঙচুর ও একটি দোকানের মালামাল লুটপাট করেছে।

মহিশকাটা বাজারের বাস কাউন্টার ভাঙচুর ও দখল করেছে। আমতলী উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব তুহিন মৃধা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন লুটপাট, দখল ও ভাংচুরের সঙ্গে বিএনপির কোন নেতাকর্মী জড়িত না। যারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কেন্দ্রীয় নেতা ও বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, কোনোপ্রকার অরাজকতা, হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও দখলের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি বা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর কোন নেতাকর্মী সম্পৃক্ত নয়। যারা এই কুকর্মটি করছে তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। আমাদের দলের মধ্য থেকে কেউ এ সকল অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সকল প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, ভাঙচুর ও দখল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছি। উপজেলা পর্যায়ে যাতে কোনো ধরনের অরাজকতার বিস্তার না ঘটে সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। গ্রাম পুলিশ ও আনসার ভিডিপি মাঠে রয়েছে। নৌবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে, যেখানে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণও দায়িত্ব পালন করছেন। খুব শিঘঘিই দেশের অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ইএইচ