কুমিল্লায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট

কুমিল্লা প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম
কুমিল্লায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট

নগদ পাঁচ লাখ টাকা, দুই ভরি স্বর্ণসহ প্রায় ৬০ লাখ টাকার ডেকোরেটরের মালামাল লুট

তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের দিন (গত ৫ আগস্ট) প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের বসতবাড়িতেও ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় কোমারডোগা নামক গ্রামের মোস্তফার ছেলে সন্ত্রাসী ঝিকু ও তার ভাই কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী শুভ বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো রকম আইনি সহায়তা পাননি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আনোয়ারের পরিবার। কারণ দেশের অন্যসব থানার মতোই লাকসাম থানাতেও চলছে পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতি। 

স্থানীয়ভাবে রোববার রাতেও এ নিয়ে সালিশ হয়। সালিশে কাজগপত্র পর্যালোচনা করে লুটপাট হওয়া বসতবাড়ী ও জমি আনোয়ারের বলে রায় দেন সালিশকারীরা। ঝিকু সেখানে হামলা ভাঙচুর লুটপাট ও দখল চেষ্টা করে অন্যায় করেছেন বলে সালিশকারীদের কাছে প্রতীয়মান হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পুলিশবিহীন সময়টাতে সেনাবাহিনীর টহলরত সদস্যদের এই ঘটনা জানানো হয়। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং লুটপাটকারী ঝিকুর বাড়িতেও গেছেন। তাদের না পাওয়ায় থানার কার্যক্রম চালু হলে মামলার পরামর্শ দেন তারা। এছাড়া মুঠোফোনেও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন তারা। যদিও ফোন বন্ধ রেখে এখন আত্মগোপনে রয়েছে ঝিকু।

ভুক্তভোগী আনোয়ারের পরিবার ও স্থানীয়রা বলছেন, লাকসাম পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও বাগবাড়ি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী জায়েদ ও শাহজাহানের কাছ থেকে কিছুদিন আগে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য চার ডিসিম জমি কেনেন আনোয়ার। দলিল, খারিজসহ সব কাগজপত্রই হালনাগাদ থাকলেও সেখানে ঘর নির্মাণের সময় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে বাধা দেয় ঝিকু। স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে সেটির মীমাংসাও হয়। যদিও সামাজিক সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই কুমিল্লার আদালতে পরপর তিনটি মামলা করে ঝিকু ও তার ভাই শুভ। আদালতের রায়ও তাদের বিরুদ্ধে যায়। আদালতের রায়ও তারা মানছে না। গত সোমবার (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই আকস্মিক ওই জমিতে গড়ে তোলা ব্যবসায়ী আনোয়ারের বাড়িতে বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ ঝিকু ও তার ভাই শুভ হামলা করে। এ সময় লুটপাট করা হয় ঘরে থাকা ব্যবসায়িক লেনদেনের পাঁচ লাখ টাকা ও দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার। খুলে নিয়ে যায় বাড়ির সব টিন, কাঠসহ যাবতীয় আসবাবপত্র। যা বিক্রি করা হয় স্থানীয় মফিজ স্টোর নামক একটি দোকানে। শুধু তাই নয়, হামলার সময় মারধর করা হয় আনোয়ারের স্ত্রী, ছেলের বউসহ নাতি-নাতনিদেরও। লুট করা হয় বেশকটি জেনারেটর, আইপিএসসহ ডেকোরেটর ব্যবসার আনুমানিক ৬০ লাখ টাকার মালামালও।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, আমি জায়গা কিনেছি পশ্চিমগাঁওয়ের দুই মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। সেখানে বাড়ি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু ঝিকু ও তার ভাই শুভ ওই জায়গার মালিকানা দাবি করে এর আগেও আমার পরিবারের ওপর একাধিকবার হামলা করেছিল। সবশেষ সরকার যেদিন ক্ষমতা ছাড়ে সেদিন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এনে আমার সব ধ্বংস করে দেয়। লুটপাট করে নিয়ে গেছে আমার নগদ টাকা, স্বর্ণ, ডেকোরেটরের সব মালামাল। ঘরের টিন পর্যন্ত লুট করে নিয়ে গেছে। এখন এ অবস্থায় আমি আমার পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব, কোথায় যাব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, আমার এত বড় ক্ষতি করল তারা; তার কোনো জবাবও পাচ্ছি না। তারা এখন পলাতক, বাড়িতেও থাকে না। আমি প্রশাসনের কাছে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। স্থানীয়রাও এ ঘটনার বিচার দাবি করছেন।

লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে গতকাল রোববার রাতে মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা হয় আমার সংবাদের। পুরো ঘটনা শোনার পর তিনি বলেন, আমরা আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কর্মবিরতিতে আছি। আইজি স্যারের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলতে পারব না। নাম প্রকাশেও অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

আরএস