শেখ হাসিনার পতন ও দেশ ছেড়ে পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত (৫ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে পিছু হটে ফেনীতে এক দফা দাবিতে রাজপথে অবস্থানকারী ছাত্র-জনতার উপর গুলি করে হত্যার নির্দেশদাতা আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম হাজারী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরাও।
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকে সর্বশক্তি নিয়ে এটি দমন করতে মাঠে নামে তারা। পুরো জেলার সকল ক্যাডারকে ফেনী পৌরসভায় জড়ো করে দেশী বিদেশি বিভিন্ন মরণঘাতী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলীয় নেতাকর্মীদের সেখান থেকেই ছাত্র-জনতার উপর ঝাপিয়ে পড়তে দেখা যায়।
এর ফলে মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজিসহ তার লিডারসহ দলীয় নেতাকর্মী, তাদের দোসর পুলিশ বাহিনী পালানোর সুযোগে ওইদিন শেষ বিকাল থেকে সেখানে গিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দলটির সুবিধা বঞ্চিত অপর একটি পক্ষ। এতে অংশ নেয় ফেনীতে বসবাসরত খুলনাসহ দেশের অন্য জেলার নিম্ন শ্রেণির বেশকিছু কিশোর, যুবক ও পেশাদার দুর্বৃত্ত।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শূন্য ওই ভুতুড়ে পরিস্থিতিতে সবাই দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে দেখা গেলেও পরদিন (৬ আগস্ট) প্রথম প্রহরে ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
পরবর্তীতে জামায়াত-বিএপি নেতাকর্মীরাও দিনরাত সেখানে পাহারা বসিয়ে এবং আশপাশের এলাকায় মাইকিং করে পৌরসভার লুট হওয়া মালামাল ফিরিয়ে দিতে সময় বেধে দেন। এতে শহরের বিরিঞ্চি ও আশপাশের লোকজনকে বেশকিছু জিনিসপত্র জমা দিয়ে যেতে দেখা গেছে।
তবুও ঘটনায় সপ্তাহখানেক পর পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে ২৫টি খাতের মূল্যায়ন করে এর আনুমানিক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫০ টাকা।
শুক্রবার বিষয়টি জানিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আবুজর গিফরী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ফেনীর উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন আমার সংবাদকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ক্ষতি নিরূপণের তালিকা করা হয়েছে। এটি সংস্কারে পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে কিছু ব্যয় হতে পারে। এক্ষেত্রে পৌর পরিষদকে এটি করতে হবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, বিএনপির কোনো নেতাকর্মী এ সমস্ত অপকর্মে জড়িত নয়। যারা এ সমস্ত কাজে জড়িত ছিল, তাদের কাউকে আমরা চিনি না। টোকাই শ্রেণির কিছু লোক ফেনী পৌরসভা, ফেনী মডেল থানাসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
জেলা জামায়াতের আমির একেএম শামসুদ্দিন বলেন, স্বৈরাচার সরকার দেশ থেকে চলে গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। কেউ যেন আর রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। আমরা এতে ব্যর্থ হলে এতজন শিক্ষার্থীর জীবন বৃথা যাবে।
ইএইচ