পারিবারিক পিছুটানকে উপেক্ষা করে দোকান কর্মচারী মবিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারিয়েছে।
প্রতিবন্ধী এক ভাইকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা গেছে তার বাবা। ঢাকার উত্তরা থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে এখন পথে বসেছে মবিনের পরিবার। তবে বর্তমানে অর্থের অভাবে থেমে রয়েছে তার চিকিৎসা। আবার নতুন করে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন মবিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধলকুড়া এলাকার মৃত মোফাজ্জল হোসেন ও নাজমা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে ১৭ বছরের মবিন। বড় ছেলে জুলহাস বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। রাখতে হয় শিকলবন্দি। আর মেজো ছেলে নাজমুল হুদা সামান্য বেতনের একজন ড্রাইভার। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে কয়েক মাস আগে ঢাকার উত্তরা রাজলক্ষী এলাকায় কম্পিউটারের দোকানে চাকরি নেয় মবিন। সারাদেশজুড়ে যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন উত্তাপ ছড়াচ্ছে আর তখনি পরিবারের কথা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের সাথে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন মবিন।
গেল ১৮ তারিখ বেলা ১১টার দিকে মিছিলটি উত্তরা থানার দিকে এগোলে হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০০টির অধিক ছড়া গুলি এসে বিদ্ধ হয় মবিনের মুখমণ্ডলজুড়ে। এরপর চোখের সামনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
গত এক মাসে দরিদ্র পরিবারটির শুধু চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে অন্তত ২ লাখ টাকা। চিকিৎসক জানিয়েছে, আরও ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হলে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি ফিরে পাবে মবিন।
দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারানো মো. মবিন বলেন, আমি দোকান বন্ধ করে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেই। উত্তরা থানার কাছে আসতেই হঠাৎ করে গুলি। কিছু না বুঝার আগেই দেখি চোখ এবং সারামাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি সেখানেই পড়ে যাই। পরে শিক্ষার্থীরা আমার গেঞ্জি খুলে মাথায় বাঁধ দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন আমি দুচোখে দেখতে পাই না। তবে ডানচোখে টর্চের আলো অনুভব করতে পারি। জানি না আবার আগের মতো দেখতে পাবো কি-না। তবে আমি দেখতে চাই।
মবিনের মেজো ভাই নাজমুল হুদা বলেন, আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডাকে আমার ভাই দেশের জন্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এখন সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো। আমার ভাইয়ের সুচিকিৎসার দাবি জানাই।
মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, দেশ আজ এক মাস ধরে স্বাধীন হলো। কিন্তু আমার ছেলে চোখে দেখতে পারছে না। আমাদের সহায় সম্বল যা ছিল তা বিক্রি করে চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর সম্ভব না তাই আপাতত চিকিৎসা বন্ধ। বাড়িটুকু বিক্রি করে হলেও ছেলেকে তো চিকিৎসা করাতে হবে। যদি সমাজের বিত্তশালী বা সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য পাই তাহলে আমার ছেলের চিকিৎসা করানো যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কয়েক মাস আগে মবিনের বাবা মারা গেছে প্রতিবন্ধী এক ছেলে রেখে। এখন মবিনের করুণ অবস্থা। ওর চিকিৎসা দরকার। চিকিৎসা হলে হয়তো ও আবার আগের মতো দেখতে পারবে। সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ এই পরিবারটির দিকে সরকার যেন নজর দেয়।
ইএইচ