আ.লীগ নেতার ‘লাইব্রেরিয়ান’ স্ত্রী কলেজের প্রিন্সিপাল

সাইফুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
আ.লীগ নেতার ‘লাইব্রেরিয়ান’ স্ত্রী কলেজের প্রিন্সিপাল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জাহানারা হক মহিলা কলেজে প্রভাষক রয়েছেন ১১ জন। কিন্তু কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী লাইব্রেরিয়ান (বর্তমানে শিক্ষক পদ মর্যাদা) তানিয়া আক্তার।

গত ৬ মাস ধরে চলছে এমন ‘তুঘলকি’ কাণ্ড। তানিয়া আক্তার ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য অপসারিত পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের স্ত্রী।

এ নিয়ে প্রভাষকদের মাঝে অসন্তোষ থাকলেও এতদিন মুখ খুলতে পারেনি কেউ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রিন্সিপাল পদে পরিবর্তনের আশা দেখছেন বৈষম্যের শিকার প্রভাষকরা। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই কলেজের সভাপতি ছিলেন।

চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাহানারা হক মহিলা কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহা. শাহাজাহান মিয়া মৃত্যুবরণ করেন।  এরপর কলেজ কমিটি জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে প্রভাষককে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব না দিয়ে লাইব্রেরিয়ান তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করেন। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর নামের তালিকার বোর্ডে তার অবস্থান ১৩। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগ নেতা কাজল সাবেক আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হওয়ায়  প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীকে প্রিন্সিপাল করেন।

একটি সূত্র জানায়, তানিয়া আক্তারকে প্রিন্সিপাল করতে কৌশলে কলেজের প্রভাষকদের কাছ থেকে ‘দায়িত্ব নিতে অপারগ’ মর্মে দরখাস্ত নেওয়া হয়।

জানা যায়, ২০১১ সালে আখাউড়া পৌরশহরের নাসরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালু করে ‘নাসরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ’ নামে পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সালে স্কুল থেকে কলেজটি আলাদা করা হয়।

স্কুলের ভূমিতে কলেজের কার্যক্রম চললেও কলেজের নাম ও প্রতিষ্ঠাতার নাম পাল্টে যায়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী আসিনুল হকের মায়ের নামে ‘জাহানারা হক মহিলা কলেজ’ নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাতা হয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। তবে এজন্য তিনি কলেজ ফান্ডে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানান এক প্রভাষক।

২০২২ সালের ৬ জুলাই কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। কলেজের ১১ জন প্রভাষক ও ৩ কর্মচারী এমপিওভুক্ত হয়। এর মধ্যে তানিয়া আক্তারের (সহকারী লাইব্রেরিয়ান) পদটি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। তিনি ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ কলেজে যোগদান করেন।

এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনায় আহ্বায়ক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক মো. ইলিয়াস মুন্সী বলেন, কলেজ কমিটির তৎকালীন সভাপতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তাকজিল খলিফা কাজলের পরামর্শে সাময়িক সময়ের জন্য তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করা হয়। পরবর্তীতে নতুন প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সভাপতির অনুপস্থিতিতে ইউএনও স্যারের পরামর্শক্রমে কলেজের কার্যক্রম চলছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল তানিয়া আক্তারের মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দিলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে, কলেজের প্রভাষক সুভাষ চন্দ্র দাস জানান, ম্যাডামের সাথে (তানিয়া আক্তার) কথা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতির উন্নতি হলে তিনি কলেজে আসবেন।

জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিকে প্রভাষক থেকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম। এক্ষেত্রে কলেজ কমিটির রেজুলেশন না দেখে বলতে পারবো না কীভাবে লাইব্রেরিয়ানকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা দরখাস্ত দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

ইএইচ