গোমতির বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত, আশ্রয়ের খোঁজে দিশাহারা মানুষ

জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০৮:৪৮ পিএম
গোমতির বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত, আশ্রয়ের খোঁজে দিশাহারা মানুষ

গোমতি নদী বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আতঙ্কে কয়েকদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে কুমিল্লার মানুষ।

বৃহস্পতিবার রাতে নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ায় ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছে বুড়িচং উপজেলার মানুষ।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানি প্রবেশ করেছে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল, পীরযাত্রাপুর, ভরাসার, বুড়িচং সদর, বাকশিমুল, রাজাপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকালয়ে। রাতে আতঙ্কিত মানুষ দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। অনেককে গোমতি বাঁধের ওপরে আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বাঁধ ধসে (ভেঙে) যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আমার সংবাদকে তিনি বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলের পানি বেড়েছে কুমিল্লার গোমতি নদী ও খালগুলোতে। রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে এই নদী। বৃহস্পতিবার রাতে বুড়বুড়িয়ায় বাঁধে ধস নামার আগ পর্যন্ত বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে।’

খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর সংরাইশ-টিক্কারচর এলাকায় গোমতি নদীর বাঁধের অংশে গর্ত দিয়ে পানি প্রবেশ করছে বলে স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা আসে। পরে এলাকাবাসী যে যার মতো করে বালির বস্তা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে দেওয়ার চেষ্টা করে।

অন্যদিকে কটকবাজার, আড়াইওড়া, চাঁনপুর, মুরাদনগর ও দেবীদ্বারের বিভিন্ন স্থানে বাঁধের গর্ত ও ফাটল দিয়ে পানি প্রবেশ করছে এমন খবর মাইকে প্রচারিত হলে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে রাত জেগে মেরামত করেন। তবে, অনেক জায়গায় গুজব ছড়ানোর কথা জানা যায়।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, গোমতি নদীর বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া অংশে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। পানির প্রবল প্রবাহের কারণে বাঁধ আরও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই সবাইকে নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে।

এদিকে কুমিল্লা সদর, মুরাদনগর ও দেবীদ্বার উপজেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে শত শত বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়া ভারতের ঢলে প্লাবিত হয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ।

গোমতীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় কুমিল্লা সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার গোমতী বাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গোমতির বিভিন্ন অংশে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো স্থানীয়দের বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করতে দেখা গেছে।

অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের পানিতে জেলার ১৭ উপজেলায় কমবেশি প্রবাহিত হয়েছে। যা এখনো অবনতির দিকে। ইতিমধ্যে জেলায় ৫৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজারের মতো লোক আশ্রয় নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৭০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

পানিবন্দি অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন মাঠে কাজ করছেন।

এদিকে, বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে দুপুরে পরিদর্শনে আসেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ার ইকবালসহ  স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা চিকিৎসক সংগঠন, কুমিল্লার নেতৃবৃন্দ।তারা বানভাসি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কলেজের অধ্যক্ষ মো. মফিজুল ইসলাম, আলোকিত যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সাংবাদিক গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ইউপি যুবদলের একেএম শাহজাহান, রাশেদুল ইসলাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৫টি। এ পর্যন্ত ৪০২০ জন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৬০,০০০ হাজার, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১,৭০,০০০ হাজার।

ইএইচ