লক্ষ্মীপুরে সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম
লক্ষ্মীপুরে সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি

লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসায় পানিতে ডুবে গেছে সদর উপজেলাসহ জেলার বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল। এতে সদর উপজেলাসহ জেলায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এর মধ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ স্থায়ী সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ও মাদরাসার ভবনে আশ্রয় নিয়েছে।

বানবাসী এসব মানুষকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে শুকনো খাবারসহ রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছোসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে।    

এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও পানির উচ্চতা আশানুরুপভাবে কমছে না। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় পানিবন্দি মানুষ ঘরে ফেরার আশা করলেও তা আবার নিমিষেই মিলিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে পানির চাপ। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নারীরা।

শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সদর উপজেলার মান্দারী, কাশাখালী, হাজিরপাড়া, উত্তরজয়পুর ও চন্দ্রগঞ্জসহ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে পানিবন্দি মানুষের দুর্বিষহ জীবনের চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত ছিল লক্ষণীয়। গ্রামের সরু খালগুলোসহ জেলার প্রধান প্রধান (রহমতখালী-ওয়াপদা) খালগুলোর কোথাও কোথাও বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন হয়নি সঠিকভাবে। অন্য দিকে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃষ্টির পানির সাথে যোগ হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

তবে রাজনৈতিক দলগুলো বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বন্যা র্দুতদের পাশে দাঁড়ালেও এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ তাদের খোঁজখবর নেয়নি বলে জানান অনেকেই।

চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর (পূর্ব) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আলী করিম, সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহাম্মদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম দিপু, ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ওমর খান, যুবদল নেতা আলতাফ হোসেন ও নূর হোসেন হারুনসহ ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে গত ৩দিন যাবত শুকনো খাবারসহ রান্না করা খাবার প্যাকটে বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।

চন্দ্রগঞ্জে ভানবাসী মানুষেরা এরই মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন, দেওয়ারশাহ দীঘিরপাড়ে সাইক্লোন শেল্টারে, কফিল উদ্দিন কলেজ, প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ইব্রাহিম গার্লস হাই স্কুল, আত-তামরীন ক্যাডেট স্কুল এন্ড মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে।  

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেওপাড়ার শাহ আলম, হারিছ মিয়া, সখিনা বেগম জানান, বৃষ্টি না থাকলে পানি কমছে না। বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। জিনিসপত্র যা আছে সেগুলো এখন পানির নিচে। জীবন বাঁচাতে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে প্রতাপগঞ্জ স্কুলের ভবনে উঠেছি। অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি কোনো ত্রাণসামগ্রী এখনো পাইনি।

এদিকে গত কয়েকদিন যাবত বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. রেজাউল করিমসহ জেলা পর্যায়ের নেতারা অব্যাহতভাবে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যেখানেই আমরা পানিবন্দি মানুষের খোঁজ পাচ্ছি সেখানেই ছুটে যাচ্ছি উদ্ধার করতে।

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান, যেসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ওইসব এলাকায় আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কাজ করছেন। আমরা পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ইএইচ