তজুমদ্দিনে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে এলাকাবাসী

তজুমদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ০৫:২৩ পিএম
তজুমদ্দিনে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে এলাকাবাসী

ভোলা তজুমদ্দিন উপজেলায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই মেঘনা নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরে। বেড়িবাঁধগুলোর বিভিন্ন স্থানের অবস্থা খুবই নাজুক ও নড়বড়ে। সামান্য স্রোতে যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে এই অরক্ষিত বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা, নষ্ট হবে ঘরবাড়ি ও ফসল।

মেঘনা যেকোনো মুহূর্তে বসতভিটাসহ ফসলি জমি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে ভেবে চিন্তিত নদী তীরবর্তী বসবাসরত লোকজন।

ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে পাঁচটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। বর্ষা এলেই ভয় আর আতঙ্কে তাদের দিন কাটে। কখন যেন মেঘনায় ভাঙনে সহায়সম্বলটুকু চলে যায়।

তজুমদ্দিন উপজেলার প্রায় ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিশাল একটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। উজানের পানির চাপ, প্রবল বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধির কারণে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরেছে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে উপজেলার দেড় লক্ষ মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শহর রক্ষা বাঁধের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারের গাফিলতিতে যে কোন মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্লাবিত হতে পারে পুরো উপজেলা।

সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর ইউনিয়নের দড়িচাঁদপুর, কেয়ামূল্যাহ, কাঞ্চনপুর, গুরিন্দা, চাঁচড়া ও কাটাখালী এলাকায় মেঘনা নদীর জোয়ার-ভাটায় পানির চাপ ও নিম্নচাপের প্রভাবে ঢেউ এসে আঘাত করে বেড়িবাঁধে। ফলে অধিকাংশ এলাকায় বেড়িবাঁধের দুই-তৃতীয়াংশ ভেঙে পানি ডুকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ সূত্র জানায়, তজুমদ্দিনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ এবং তীর সংরক্ষণে ব্লক ও জিও ব্যাগ নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০২২ থেকে ২৬ অর্থবছরে তজুমদ্দিনের সোনাপুর অংশে দুই কিলোমিটার ও চাঁদপুর-চাঁচড়া অংশের ৬ কিলোমিটারসহ বেতুয়া পর্যন্ত মোট ২৮ কিলোমিটার রেড়িবাঁধ নির্মাণ, জিও ব্যাগ, ব্লক, ড্যাম্পিং, সুইজগেট ও রাস্তা পাকা করণের প্রকল্পে প্রায় ১১শত কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে কাজ শুরু হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। ফলে পানির চাপে পূর্বের বেড়িবাঁধের বেশ কিছু অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া কাজের ধীরগতির কারণে ইতোমধ্যে বহু পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারের লোকজন মেঘনা নদী থেকে বালু তুলছে। যে কারণে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেশি। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশে টিউব জিও ব্যাগে যে বালি দেয়া হয়েছে তা সামনের নদী থেকে তোলা হয়েছে।

তারা আরও জানান, লোকাল বালি হওয়ার কারণে জোয়ারের পানির চাপে টিউব ব্যাগ থেকে বালি বেড় হয়ে যাইতেছে।

চাঁদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বশিরউল্যাহ হাওলাদার বলেন, বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামত না করলে যে কোন সময় বাঁধ ছিড়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রকল্পের ৫নং সাইড বি.জে জিও টেক্সটাইলের সাইড ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল আহাম্মেদ বলেন, বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক ও বালি সংকট রয়েছে। তারপরও টিউব জিওব্যাগের মাধ্যমে বাঁধ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন- বেড়িবাঁধের যে অংশে ভাঙন হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইএইচ