বছরের পর বছর অনাদরে পড়ে আছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অসংখ্য গাড়ি। রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও অফিসের কাজে ব্যবহৃত অসংখ্য পুরাতন এসব গাড়ি।
উপযুক্ত সময়ে নিলামে গাড়িগুলো বিক্রি করতে পারলে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেতো। ভাঙারি লোহার দরে বিক্রির উপযোগী এখনো থাকলেও হয়তো এক সময় মিশে যাবে মাটিতে। এতে সরকার হারাবে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব।
নতুন গাড়ি বরাদ্দের পর পুরাতনগুলো নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করার বিধান থাকলেও সেদিকে তেমন খেয়াল নেই কারও। সঠিক ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ না করায় ইঞ্জিনসহ মূল্যবান অংশ সরিয়ে নিয়েছে কোন চক্র।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানসহ জেলা প্রশাসন জানায়, পুরোনো গাড়ি ফেরত দেয়ার বিধান থাকলেও যে সব কারণে এসব গাড়ি নষ্ট হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি সরকার যাতে রাজস্ব সঠিকভাবে পায় তার ব্যবস্থা দ্রুত করা হবে।
জানা যায়, মাদারীপুরে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথসহ কয়েকটি সরকারি অফিসে ২০টি গাড়ি বছরের পর বছর পড়ে আছে। সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া কাজ তদারকি ও সেবার জন্যও সরকারি গাড়ির ব্যবহার রয়েছে। ফলে অনেক অফিসে নতুন গাড়ি বরাদ্দ পাওয়ার পর পুরাতন গাড়িগুলো অযত্ন আর অবহেলায় খোলা আকাশের নিচে বছরের পর পর বছর পড়ে থাকে। এতে দিনে দিনে তা ভাঙারি পণ্যে পরিণত হচ্ছে। মরিচা ধরে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এমনকি গাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো চুরি হয়ে গেছে অথবা কোন চক্র তা সরিয়ে নিয়ে গেছে।
জিপ, অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো, বিটুমিন ট্রলি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যান রয়েছে এ তালিকায়।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, লতাপাতায় চাপা পড়েছে চারটি গাড়ি। দুটি সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স অন্যটি সিভিল সার্জনের ব্যবহৃত পুরাতন গাড়ি আরেকটি মাইক্রোবাস। মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পশ্চিম দিকে মাঠের মধ্যে পড়ে রয়েছে ৪টি গাড়ি। এর মধ্যে ইউএনওর ব্যবহারের একটি গাড়ি ব্যবহার অযোগ্যের তালিকায় না গেলেও মেরামত না করার কারণে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তারপাশে পুকুর পাড়ে একটি পাজেরো গাড়ি নষ্ট হতে হতে প্রায় মাটির সাথে মিশে গেছে।
সার্কিট হাউজের মধ্যে দুটি গাড়ির একটি ব্যবহার উপযোগী থাকলেও তা মেরামত করা হচ্ছে না গাড়ি সংকট না থাকায়। অন্যটি পড়ে আছে বছরের পর বছর।
সড়ক ও জনপথ অফিসে নির্বাহী প্রকৌশলীর পুরোনো গাড়িটি গ্যারেজেই আছে বছরের পর বছর ধরে। এছাড়া অফিসের দক্ষিণ পাশে বিটুমিন বহনকারী একটি ভারী ট্রলি অনেকদিন যাবৎ পড়ে থাকায় লতাপাতায় গাড়িটি ঘিরে রেখেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের পূর্বপাশে পড়ে আছে একটি পাজেরো গাড়ি। গাড়িটি দেখতে এখনো তেমন পুরোনো মনে হয় না। সেটিও ব্যবহার করা হচ্ছে না। শুধু জেলা শহরের এ চিত্র হলেও উপজেলাতেও বিভিন্ন দপ্তরে অনেক গাড়ি পড়ে আছে বলে জানা যায়।
সচেতন মহল মনে করছে, কর্মকর্তাদের অবহেলায় সরকারি এসব সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুলো নিলামে বিক্রি করতে পারলে সরকারি কোষাগারে অনেক টাকা জমা হতে পারতো। গাড়ি দুটি চলাচলের উপযোগী থাকলেও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে নষ্টের পথে। ভাঙারি লোহা হিসাবে বিক্রি ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না। গাড়িগুলো যথাসময়ে নিলামে বিক্রির করা গেলে কয়েক লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হত।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে অনেক গাড়ি। এসব গাড়ি মেরামত করে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেগুলো অকেজো হয়ে গেছে সেগুলো নিলামে বিক্রি করলে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব পাবে। সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সদস্য ইয়াকুব খান শিশির বলেন, কর্মকর্তাদের অবহেলায় সরকারি এসব সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। গাড়িগুলো যথাসময়ে নিলামে বিক্রির করা গেলে কয়েক লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হত।
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ খান বলেন, গাড়িগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে বিক্রি সম্পন্ন করা যায়নি। তবে দ্রুত নিলামের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, দুটি গাড়ি অকেজো আছে। সেগুলো নিলামের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুরের বিআরটিএ সহকারী পরিচালক মো. নুরুল হোসেন বলেন, ‘সরকারি গাড়ি নিলামে বিক্রির আগে বিআরটিএর অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে জেলা প্রশাসনেরসহ ৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য আবেদন এসেছে। আর কোন আবেদন নেই। নিলামের জন্য সুপারিশ করা হলো অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশসাক মো. মারুফুর রশীদ খান বলেন, ‘নিলাম হলে সরকারের স্বাভাবিকভাবে রাজস্ব হয়। তবে আইনি জটিলতা থাকলে বিক্রি করা যায় না। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য সব দপ্তরে পুরোনো গাড়ি নিলামের জন্য বলবো। আশা করি দ্রুত এসব পুরোনো গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করে বাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে।
ইএইচ