অনিয়মে জর্জরিত হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

কাজী আসাদুজ্জামান খোকন, হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
অনিয়মে জর্জরিত হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ব্যাপক অনিয়ম আর লোকাল অর্ডার ও জনবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লোকাল অর্ডারে বেশ কয়েকজন ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সুবিধামতো হাসপাতালে অবস্থান করে বেতন ভাতা উত্তোলন করছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়নকৃত ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট, কর্মচারী অন্যত্র থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সাধারণ মানুষ।  

৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির সরকারি বিধিমোতাবেক অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৬৯টি থাকার কথা থাকলেও বিদ্যমান পদসংখ্যা রয়েছে ৯৯টি এবং শূন্য পদসংখ্যা ৭০টি।

এছাড়াও বিদ্যমান ৯৯টি পদসংখ্যার জনবল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে বেতন ভাতা উত্তোলন করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লোকাল অর্ডারে দীর্ঘদিন ধরে নিজের সুবিধাজনক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন, ডা. মোছা. শাহানা আফরীন জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) বর্তমানে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল লালমনিরহাট সদরে, ডা. মো. সুজন মন্ডল মেডিকেল অফিসার (হোমিও/ইউ/আয়ু) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছেন, মো. মকবুল হোসেন এসএসিএমও আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠগ্রাম, মো. মমিনুল আজিম চৌধারী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) আছেন ঢাকায়, মো. গোলাম ফারুক আছেন সদর উপজেলা লালমনিরহাট, নিখিল চন্দ্র রায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বর্তমানে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল লালমনিরহাট সদরে অবস্থান করছেন।

এসব ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট, কর্মচারী বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যত্র অবস্থান করলেও বেতন ভাতা উত্তোলনসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে।

শিশুর চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সিংগীমারী এলাকার মনিরা আক্তার এবং মাসুদা আক্তার সুমনা বলেন, বহির্বিভাগে আমরাসহ অনেক মহিলা তার শিশু সন্তানের চিকিৎসা নিতে এসে শিশু বিশেষজ্ঞ শাহানা আফরিনের দেখা না পাওয়ায় জরুরি বিভাগের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হচ্ছে। শুনেছি ডা. শাহানা আফরিনের প্রতিদিন বহির্বিভাগে বসার কথা থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাহিরে থাকেন, সপ্তাহে নাকি একদিন আসেন। এতে শিশুদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাতীবান্ধার মানুষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে কর্মরত একজন বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি থেকে শুরু করে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, ইসিজি, অপারেশন থিয়েটারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাব, আবার যারা আছেন তাদের দক্ষতার অভাবে এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জরুরি বিভাগ, অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা প্রদান, আউট ডোর, অ্যাম্বুলেন্স সেবায় নেই পর্যাপ্ত লোকবল। তাছাড়া এখানে একজন হোমিও, ইউনানি ও আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লোকাল অর্ডারে বাহিরে থাকায় সরকার প্রদত্ত অনেক মূল্যবান ওষুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক অনিয়ম আর লোকাল অর্ডারে জর্জরিত হয়ে লাজুক অবস্থা হাসপাতালের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, আমি নতুন এসেছি। সমস্যা উত্তোরণের চেষ্টা করছি, লোকাল অর্ডারের কারণে স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লোকাল অর্ডার বাতিলের চিঠি দিয়েছি।

ইএইচ