কালাইয়ে চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪, ০৩:৪১ পিএম
কালাইয়ে চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট ও সরঞ্জামের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য চিকিৎসকের ২৬টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৩ জন।

বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। তবে কর্মরত ঐ ১৩ জন ডাক্তারের সঙ্গে ৭ জন সহকারী মেডিকেল অফিসাররা (স্যাকমো) তাদের নিজ নিজ দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি আন্তঃবিভাগ, জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরের সাথে লিয়াজো মেনটেইনে সবসময় ব্যস্ত থাকেন। একই সাথে প্রতিদিন শতাধিক নানা রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ঐসব কর্মরত ডাক্তার ও সহকারী মেডিকেল অফিসাররা (স্যাকমো)। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

স্ত্রীরোগ, সার্জারি–বিশেষজ্ঞ না থাকায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ। তবে সপ্তাহে ২ দিন সিজার করা হয়। চিকিৎসকের অর্ধেক পদই শূন্য থাকায় এখানে এসে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অসচ্ছল ও দরিদ্র রোগীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও সরঞ্জামের সংকটও রয়েছে। চিকিৎসক ও সরঞ্জাম সংকটে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের কক্ষও আছে। অথচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার (অপারেশনের) কাজও হয় না। অপারেশনের যাবতীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও জেনারেটর, সৌর বিদ্যুৎ অকেজো এবং ডিজিটাল এক্সরে মেশিন থাকলেও ফিল্মের অভাবে বন্ধ থাকে এর ফলে পুরোনো দিনের এক্সরে মেশিন দিয়ে চলছে এক্সরে কার্যক্রম এছাড়াও আলট্রাসনোগ্রাম সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিনে করা হয়।

কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞের (জুনিয়র কনসালটেন্ট) ১০টি পদ আছে। এগুলো মেডিসিন, সার্জারি, স্ত্রীরোগ (গাইনি এন্ড অবস), শিশু, অর্থোপেডিকস, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও হৃদরোগ (কার্ডিওলজি)। কয়েক বছর ধরে এসব পদ শূন্য।

এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৪৯টি পদ ফাঁকা রয়েছে। ঐসব পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকার ফলে হিমশিম খাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এর ফলে এখানে এসে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। স্ত্রীরোগ–বিশেষজ্ঞ না থাকায় নারীদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অডিটরিয়াম (হলরুম) না থাকার কারণে সভা-সেমিনারসহ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে আবাসিক ভবন সংকট থাকায় ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা বেশির ভাগ বাহিরে থাকছেন।

কালাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পৌর সদরের আবু বক্কর অভিযোগ করে বলেন, আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। এখানে এসে দেখি শিশু ডাক্তার নেই। কর্তব্যরত এক ডাক্তার বললেন জয়পুরহাট সরকারি আধুনিক হাসপাতালে যেতে। এখানে ডাক্তার থাকলে আমাদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হতো।

উপজেলার করিমপুর গ্রামের শাপলা খাতুন নামের একজন রোগী হাসপাতালে গাইনি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে এলে তাকে না পেয়ে তিনি বলেন, শুনলাম অনেক দিন ধরে হাসপাতালে গাইনি ডাক্তার নেই। তাই ফিরে যাচ্ছি। আমি গরীব মানুষ কি করবো ভেবে পাচ্ছি না, আমাকে জরুরি ভিত্তিতে গাইনি ডাক্তার দেখাতে হবে। এখন কোন উপায় না, তাই যেকোনো ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে।

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ফায়সালা নাহিদ পবিত্র বলেন, স্বল্প জনবল দিয়েই রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। শূন্য পদে চিকিৎসক ও জনবল দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে।

ইএইচ