লক্ষ্মীপুরে বন্যার কারণে গেলো আটদিনে সহস্রাধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ও দেড় শতাধিক ব্যক্তি সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পানিতে ডুবে দুইজন ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
আতঙ্কিত না হয়ে বিশুদ্ধ পানি পান ও সচেতনতার সাথে চলাচল করার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা।
লক্ষ্মীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেয়া তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুরে বন্যা শুরু হলে গেলো ২২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) থেকে ৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে ৩২০ জন, সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ১৩০ জন, রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৮৬ জন, রামগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৫০ জন, কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৪৮ জন ও রামগতি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৬৩ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সূত্রে জানা যায়, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা (আর.টি.আই) নিয়ে জেলায় ৪০ জন, সর্প দংশনে ১৪৪ জন ও পানিতে ডুবে আক্রান্ত একজন চিকিৎসা নিতে আসেন। জেলা সদর হাসপাতালসহ পাঁচটি উপজেলায় ৬৪টি মেডিকেল টিম, ৫৮টি ইউনিয়নে ১৮০জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ও স্বাস্থ্য সহকারীরা ক্লিনিক ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারসহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মী ও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়ে সেবা দেয়া হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের করইতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন ৭০ বছর বয়সী হোসেন মিয়া। তিনি জানালেন, বন্যার পানিতে চুলকানি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। এতো পানির মাঝেও ক্লিনিক থেকে ওষুধ পেয়ে তিনি খুব খুশি। এসময় হাঁটু পরিমাণ পানিতে দাঁড়িয়ে ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ও স্বাস্থ্য সহকারীকে সেবা দিতে দেখা যায়।
সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা মিলে কয়েকজন স্বাস্থ্য কর্মীর। তারা বন্যার পানির কারণে তাদের নির্ধারিত পোশাক ভিজে গেলেও হাসিমুখেই সেবা দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ কলাগাছে ভেলায় চড়ে, কেউ বুক পরিমাণ পানি ডিঙ্গিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীদের খবর নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া জানান, গত এক সপ্তাহে ৪০ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এর মধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে সদর হাসপাতালে রেফার করেছি। তিনি বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ এবং চর্ম রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দত্তপাড়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী আবুল হোসেন বলেন, এবারের বন্যা স্মরণকালের ইতিহাসের বন্যা। তবুও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি টিকা কার্যক্রমও তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর জানালেন, পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় দেড়গুণ বেশি রোগী এসময় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন বলে জানালেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বিআরইউ