শ্রেণীকক্ষ সংস্কারের টাকা দিয়ে শিক্ষক বিশ্রামাগার সংস্কার

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম
শ্রেণীকক্ষ সংস্কারের টাকা দিয়ে শিক্ষক বিশ্রামাগার সংস্কার

রংপুরের মিঠাপুকুরে একটি  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে  শিশুদের পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম দেখা গেছে শিক্ষার্থীর মাথার উপর।

খণ্ড খণ্ড ফাটল  ও নড়বড়ে অবস্থাতেই চলছে পাঠদান। আর বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায়  কাটাচ্ছেন বেশির ভাগ অভিভাবক। এছাড়াও ওয়াশব্লক সংস্কারের পুরো টাকা আত্মসাৎ ও ২শ ৫০ কেজি চলতি বছরের বই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শঠিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ ঘটনায় চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বিদ্যালয়টির ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা, ওয়াশ ব্লকের কাজ বাবদ আরও ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বিদ্যালয়টির  প্রধান শিক্ষক। কাজ না করেই তৈরি করা হয়েছে ভুয়া ভাউচার। ক্ষুদ্র মেরামত ফান্ডের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ভবনের ফাটল সংস্কার ও পলেস্তারা করা। তা না করে শিক্ষক বিশ্রামাগার টাইলস করেছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক।  তিনি বলেন, ২ লাখ টাকার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ টাকার কাজও হয় নি। শিক্ষক বিশ্রামাগার ভবনের পুরোটা নিম্নমানের রং করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে দাখিল করা বিল ভাউচারে নানা রকম অসংগতি পাওয়া যায়।  ওয়াশ ব্লকের কাজের বিপরীতে ২০ হাজার টাকার বরাদ্দ থাকলেও সরজমিনে কোন কাজ দেখা যায়নি। ওয়াশক্লকের গেট সংস্কার বাবদ খরচ দেখালেও তা করেননি প্রধান শিক্ষক। ভাউচারে মোহল লাল নামে একজন কর্মীকে দিয়ে ওয়াশব্লক ৩৬ দিন পরিষ্কারের বিল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে এমন কাজ করতে দেখেননি শিক্ষকরা।

এছাড়াও কয়েকদিন আগে চলতি অর্থ বছরের প্রায় প্রায় ২ শ ৫০ কেজি বই বিক্রি করেছেন প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক আজমল হোসেন বলেন, আমাদের সন্তানরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠ গ্রহণ করছে। তাদের মাথার উপর ছাদগুলো ফেটে চৌচির। সেগুলো সংস্কার না করে শিক্ষক বিশ্রামাগারে টাইলস লাগানো হয়েছে। আরেক অভিভাবক বিপ্লব রহমান বলেন, ওয়াশব্লকের কোনো কাজ না করে টাকাগুলো আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিক্রি করা হয়েছে চলতি বছরের বইগুলো।

বিদ্যালয়টির দাতা সদস্য সন্তোষ কুমার রায় বলেন, প্রধান শিক্ষক শ্রেণীকক্ষ মেরামত না করে ইচ্ছেমতো খরচ করেছেন। ওয়াশব্লকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল মান্নান ও শেরআলী মেম্বারও প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেন, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ পেয়েছেন।

তবে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান তার বিরুদ্ধ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রধান শিক্ষক কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি করলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযুক্ত শঠিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরানী পারভীন আনছারী বলেন, সংস্কারের টাকা দিয়ে শিক্ষকদের কক্ষে টাইলস ও কিছু আসবাবপত্র ক্রয় করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীকক্ষে কাজ না করা, ওয়াশব্লকের মেরামতের টাকা আত্মসাৎ ও চলতি বছরের বই বিক্রি সম্পর্কে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক নূরানী পারভীন আনছারী।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মল হক শাহ্ বলেন, এধরনে কোন অভিযোগ পাইনি। যদি কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিআরইউ